ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ এ ভূমিকম্পে নিমিষেই জেলাজুড়ে ভয়ংকর সকালে পরিণত হয়। এর মধ্যে বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীতে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। এ সময় পুরো জেলা কেঁপে ওঠে। বিশেষ করে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালের মানুষ আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। দিগি¦দিক হারিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় যুদ্ধাবস্থা। ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনের একটি ট্রান্সফরমার আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপর ট্রান্সফরমারগুলোর বেশির ভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকায় ছয় তলা নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক তলা ভবনের ওপর পড়েছে। এতে বাড়ির মালিক দেলোয়ার, ছেলে ওমর ও মেয়ে তাসফিয়া আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাবা ছেলেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় নেওয়ার পর বাবা ছেলের মৃত্যু হয়। এদিকে ঘোড়াশাল এলাকায় ছয়টি বাড়ি ও এস এ প্লাজা নামে একটি সাত তলা শপিং মলে ফাটল ধরে। পাশাপাশি ঘোড়াশাল বাজারের বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে দেয়ালের ইট পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের আঙিনায় মাটি দেবে যায়। ঘোড়াশাল বাজারের জুতার দোকানি আলম মিয়া বলেন, ভূমিকম্প শুরু হলে দোকানের সব কিছু পড়ে যায় এবং আসবাবপত্র ভেঙে গেছে।
বাজারের মুদি দোকানদার আসলাম মিয়া বলেন, প্রথমে ভূমিকম্প বুঝতে পারিনি। মনে হয়েছে কেউ হামলা করেছে। পরক্ষণেই বুঝতে পেরেছি, এটি হামলা নয়, ভূমিকম্প। ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি সালাহ উদ্দিন আনসারী বলেন, আমাদের ছয় তলা ভবনের ৪-৫ জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়েছে, আতঙ্কিত ছিল। ভবনের মালিক আমানউল্লাহ বলেন, ভূমিকম্পে আমার ভবনে কয়েক জায়গায় ফাটল ধরেছে। ভবনের সব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। কেউ ভয়ে দোকান খুলছেন না। পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুস সহিদ জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে ঘোড়াশালসহ পলাশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের চেষ্টা করছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশানা কবির বলেন, ভূমিকম্পে আহত হয়ে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আহতরা আসছেন। নরসিংদীর পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম দুপুরে গাবতলী এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ভূমিকম্পে জেলায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। যে কোনো দুর্যোগে জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছে।