গণহত্যার সময় কোনো বাহিনী বা দলের নিষ্ক্রিয়তার বিচার, গুম, যৌন নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিধান যুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আট ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন পাঁচটি ধারা-উপধারা সংযোজন এবং তিনটি ধারা সংশোধন করে প্রস্তুত করা হয়েছে খসড়া। গণহত্যায় নেতৃত্বের অপরাধে রাজনৈতিক দলকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার মতো বিধানও যুক্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়। গতকাল রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে আয়োজিত মতবিনিয়ম সভায় এ প্রস্তাব তুলে ধরে আইন ও বিচার বিভাগ।
সভায় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ সময়োপযোগী করতে প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধন উপস্থাপন করা হয়। এতে ৪এ, ১৩এ ও ২০এ নামে তিনটি নতুন ধারা এবং ৩(৩) ও ১২(২) নামে দুটি নতুন উপধারা যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ৩(২)(এ), ৪(২) ও ১৯ ধারায় সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়। মতবিনিময় সভায় বিশিষ্টজনেরা বলেন, আইনের সংশোধন এমন হতে হবে, যেন এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। সভাপতির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডে জনগণ নিজ চোখে দেখেছে একটি বৃদ্ধ প্রজন্ম দেশের একটি তরুণ প্রজন্মকে উন্মত্তভাবে খুনের নেশায় মেতেছিল। তিনি বলেন, ‘এ খুনের বিচার অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আমরা প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার বিচার করতে চাই না। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’ ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সচল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বোর্ড (ট্রাইব্যুনাল) পুনর্গঠন করা। আমরা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের সংস্কার কার্যক্রম এখানেই থেমে থাকবে না। যাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাঁদের সবার মতামত নিয়ে এ আইন সংশোধন করা হবে।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম রব্বানী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ; শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান; লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী; নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার; সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না; সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ; সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দীকা; রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অফিসের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন; সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান; আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া; সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট ড. জাহেদুর রহমান প্রমুখ।