শুধু রাজধানীতে নয়, ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে কয়েক জেলায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশক নিধন কার্যক্রমে স্থবিরতা ও সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু তীব্র আকার ধারণ করছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দিনে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৯২৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ৪৩২ জন এবং বাকিরা ঢাকার বাইরের। এ সময় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭১৬ জন। গতকাল পর্যন্ত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩১ হাজার ৫০৪ জন। মারা গেছেন ১৮২ জন। সরকার পরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা-উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর ১২ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। একই সঙ্গে ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালনের জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে পৃথক কমিটি গঠনের আদেশ জারি করা হয়। এতে প্রশাসককে প্রধান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের দুই কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে ২৫ জন করে। কমিটিতে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। এসব প্রতিনিধিই কাউন্সিলর হিসেবে সেবা প্রদান করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে অন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সংখ্যাভেদে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ১০ জন করে থাকা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকেও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালনের আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, তাদের নিজস্ব আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। পাশাপাশি কাউন্সিলরদের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করতে হবে। অপসারণ করা ১৭২ জন কাউন্সিলরের পরিবর্তে ৭০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের সরেজমিনে উপস্থিত না থাকা এবং মশার ওষুধ ও যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত না থাকার কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কমিটির কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। তবে দুই সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করলেও দৃশ্যমান সাড়া মিলছে না। বস্তুত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।
এ বিষয়ে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু রোগীকে কেন্দ্র করে হটস্পট নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যেসব এলাকায় বা বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেই বাড়ির চতুর্দিকে ২০০ মিটার পর্যন্ত ফগিং মেশিন দিয়ে ক্রাশ করে এডিস মশা মেরে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি ব্রিডিং সোর্স ম্যানেজমেন্টও করতে হবে। যেসব পাত্রে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে এডিস মশার প্রজনন হতে পারে সেগুলো ফেলে দেওয়া অথবা ম্যানেজমেন্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। তিনি আরও বলেন, নগরবাসীকে নিশ্চিত করতে হবে নিজের বাড়ি এবং বাড়ির আঙিনায় যেন কোনো প্রকার প্রজননস্থল না থাকে। যদি প্রজননস্থলগুলো এমন হয় যে, এটিকে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না; তাহলে সেখানে করপোরেশনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে বলে এসেছি মশা মারার অ্যারোসল এবং কয়েলের মতো করে মশার লার্ভা মারার কীটনাশক মানুষের হাতের নাগালে আসা প্রয়োজন। একজন নাগরিক ইচ্ছা করলে যেন নিজেই নিজের বাড়ির মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই সুযোগটি নগরবাসীর হাতে থাকা প্রয়োজন।
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। প্রতিনিধিদের পাঠানোর সংবাদে রয়েছে বিস্তারিত। মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চাঁদনী আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ঢাকার ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। চাঁদনী উপজেলার উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের যাদুয়ারচর গ্রামের হৃদয় সরদারের স্ত্রী। তার তিন মাস বয়সি এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
বরিশাল : ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে এক তরুণী ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানিয়েছেন। এ ছাড়াও বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।