জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের (৫৩ ব্যাচ) এক শিক্ষার্থীর ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম তাকিয়া তাসনিম বিভা (১৯)। তিনি জাবির নবনির্মিত বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
আজ রবিবার ভোর ৫টায় হলটির ৭০০৫ নম্বর কক্ষে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান শিক্ষার্থীরা। এরপর তার লাশ ঝুলন্ত থেকে নামানো হয়।
নিহত তাকিয়ার বাবার নাম আরিফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালীতে। তাকিয়া তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
প্রত্যক্ষদর্শী তার হলের একই ব্লকের শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলেন, ‘ভোর ৪টা ৪৬ মিনিটে একটি নম্বর থেকে আমার নম্বরে কল আসে। অপর পাশ থেকে একটা ছেলে বলে তুমি কি তাকিয়ার পাশের রুমের? আমি বলি আমার থেকে একটু দূরে ওর রুম। সে বলে দ্রুত তাকিয়ার রুমে যাও, সে সুসাইড করতে পারে। পরে আমি দৌঁড়ে তাকিয়ার রুমে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করি। এরপর আরও কয়েকজন লোক জড়ো হয়। পরে দরজা ভেঙে দেখি সে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। এটা দেখে সেখানেই কয়েকজন পড়ে যায়। পরে কয়েকজন ধরে তাকে বিছানায় নামানো হয়।’
আরেক শিক্ষার্থী উম্মে মারিয়াম বলেন, ‘আনুমানিক ভোর ৫টায় খবর পাই ৭০০৫ নম্বর রুমে একজন শিক্ষার্থী ঝুলে আছে। সেখানে গিয়ে দেখি তাকিয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়েছে। এরপর একটি বটি দিয়ে ওড়না কেটে তাকে খাটে শুইয়ে দিই। তখন গলায় হাত দিয়ে দেখি তার গলা ঠান্ডা আবার হালকা গরমও ছিল। গলায় তেমন দাগ ছিল না। তার পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হলটির শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, তাকিয়া তারামন বিবি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও তিনি নিয়মিত হলে থাকতেন না। তিনি সাভারে তার মামার বাসায় থাকতেন। গতকাল শনিবার তিনি হলে আসেন বলে জানিয়েছেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।
নিহত তাকিয়ার স্থানীয় অভিভাবক মামা মনির হোসেন বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার ফোনে হল থেকে একটা কল আসে। এরপর আমাকে বলা হয়, তাকিয়া আত্মহত্যা করেছে। পরে আমি সাভার থেকে ঘটনাস্থলে যাই এবং দেখি যে তাকে ওড়না কেটে খাটের ওপর নামানো হয়েছে। এর আগে আমি তাকিয়ার বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানাই। তার বাব মা মাগুরা থেকে রওনা হয়েছে।’
আশুলিয়া থানা পুলিশের ডিউটি অফিসার মাসুদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে নিহত শিক্ষার্থীর তথ্য নিয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী ও তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নিহতের পরিবার এবং হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তার ময়নাতদন্ত করা হবে। তারা অনুমতি না দিলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তাকিয়ার ব্লকের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাকিয়া রুমে একাই থাকতেন এবং হলে নিয়মিত থাকতেন না। তার রুমের বাকি সদস্যরা হলে থাকতেন না।
তাকিয়ার সহপাঠীরা ধারণা করছেন, প্রেমিকের সাথে মনোমালিন্যের জেরে তাকে ভিডিও কলে রেখে তাকিয়া আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ নিহতের রুম থেকে ডায়েরি, ল্যাপটপ এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ