চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্যার পানিতে ৮ হাজার ৩ শত কৃষকের আমন ধান, ভুট্টাসহ ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। একদিকে ভাঙন, অন্যদিকে বন্যা নিয়ে শঙ্কায় দিন পার করছেন নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেলেও জেলায় বন্যার আশঙ্কা নেই।
সূত্রমতে, গত ১২ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে পানি বেড়েছে মাত্র ১ সেন্টিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এরপর দুই দিন পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার পর পানির সমতল কমতে থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম শোভন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টায় শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর পাঁকা পয়েন্টে পানির সমতল ছিল ২১ দশমিক ৭১ মিটার এবং ৬ ঘণ্টা পর বেলা ৩টায় ১ সেন্টিমিটার বেড়ে পানির সমতল হয় ২১ দশমিক ৭২ মিটার। এদিকে গত ৫-৬ দিন ধরে পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মা পাড়ের মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু জমিতে আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চলের ৮ হাজার ৩ শত কৃষকের ২ হাজার হেক্টর জমির আমন, ভুট্টা, হলুদসহ শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বন্যা-পরবর্তী তালিকা প্রস্তুত করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম জানান, চলতি বন্যায় দ্রুত আলাতুলী ইউনিয়নের চর আলাতুলী, আলাতুলী, কোদালকাঠি ও নারায়নপুর ইউনিয়নের সেফালি পাড়া, কারেন্ট চর, এগারো রশিয়া, জোহুরপুর ও উত্তর পাড়ায় ৫৫০ পরিবারের মাঝে ১৫ কেজি চাল বিতরণ করা হবে। এছাড়া বুধবার নারায়নপুর ইউনিয়নে ১৫০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তেল, লবণ, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, গত সোমবার (১১ আগস্ট) জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের ৭ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. আহসান হাবীব বলেন, সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর, বাতাসমোড়, পাঁকার ঘাট, মনোহরপুর, ঝাইলপাড়া, মল্লিকপাড়া ও পোলাডাঙ্গা বিওপি এলাকার ডান ও বাম তীর মিলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যার পানি কমলে ভাঙন তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পোলাডাঙ্গা বিওপি ও মনোহরপুর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলমান রয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল