অযত্ন আর অবহেলায় বেহাল মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ও জনপ্রিয় উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’ রচয়িচা তিনি। ৬১ হিজরিতে কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনাবলিকে উপজীব্য করে এ মহাকাব্যিক উপন্যাস রচনা করেন তিনি। এ অমরকৃতির জন্য রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রাম পদমদী গ্রামে তাঁর সম্মানে গড়ে তোলা হয় এ স্মৃতি কেন্দ্র। সরকার ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে ৮৪ শতাংশ জমির ওপর ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় স্মৃতি কেন্দ্রটি। তখন এই স্মৃতি কেন্দ্র ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র ও একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সাহিত্যপ্রেমীরা এতে আশান্বিত হয়েছিলেন। অনেকেই এই স্মৃতি কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ হতেন। তবে অযত্ন আর অবহেলায় দিনদিন সৌন্দর্য হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। লোকবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্মৃতি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা। সাহিত্যপ্রেমীরা হচ্ছেন বিমুখ। গতকাল দুপুরে সরেজমিন মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতি কেন্দ্রে কোনো দর্শনার্থী নেই। দুজন কর্মচারী বারান্দায় বসে অলস সময় পার করছেন। স্মৃতি কেন্দ্রের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। স্মৃতি কেন্দ্রের সংরক্ষিত মীর মশাররফ হোসেনের লেখা বইগুলো পাঠকের অপেক্ষায় বুক সেলফে সাজানো রয়েছে। কেন্দ্রে প্রবেশপথের দুই পাশে থাকা লাইটগুলো খোয়া গেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। মানুষ সাধারণ ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়। অথচ সেই সময় অর্থাৎ শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে স্মৃতি কেন্দ্রটি। তার পরও পাঠক ও দর্শনার্থী কেন্দ্র এলে তাদের বসার স্থান নেই। বেঞ্চগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সংকট রয়েছে।
কবি নেহাল আহম্মেদ বলেন, আমি কয়েকবার মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র গিয়েছি। সেখানে গিয়ে সাহিত্যিকরা লেখালেখি করবেন অথবা সময় কাটাবেন তেমন পরিবেশ পাইনি। সংগ্রহশালায় তেমন কিছু নেই, ইন্টারনেট সংযোগ নেই, বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বেশির ভাগ সময় স্মৃতি কেন্দ্রটি বন্ধ থাকে। সোহেল মিয়া নামে স্থানীয় এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে মীরের স্মৃতি কেন্দ্র ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র ও একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা শোনা যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আর কেউ নজর দেয়নি। এখন প্রতি বছর নামমাত্র মীরের জন্মদিন পালন করা হয়। এ ছাড়া সংগ্রহশালায় মীর মশাররফ হোসেন বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের নিদর্শন থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি কবি সালম তাসির বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন। প্রতিষ্ঠানটি বাংলা একাডেমি পরিচালনা করেন। জেলা প্রশাসন স্মৃতি কেন্দ্রে কাজ করতে ইচ্ছুক। এ ক্ষেত্রে বাংলা একডেমির আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, সম্প্রতি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রটি আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে বেশ কিছু কাজ করা দরকার। মীরের স্মৃতি কেন্দ্রটি বাংলা একাডেমির অধীনে। সেখানের উন্নয়ন কর্মকা ও পরিচালনা বাংলা একাডেমি করে থাকে। আমাদের নজরে আসা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বাংলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্মৃতি কেন্দ্রে আসা দর্শনার্থী ও পাঠকদের জন্য বসার বেঞ্চ মেরামত, দেয়ালে রং করা, ইন্টারনেট সংযোগসহ বেশ কিছু কাজ করা হবে।
জানা যায়, ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর মীর মশাররফ হোসেন কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদী গ্রামে। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীর কালজয়ী এই সাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে বিবি কুলসুমের পাশে সমাহিত করা হয়।