লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সহর উদ্দিন সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ সরকারিভাবে সংস্কার করে সেখানে নিজের আবাস গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বিদ্যালয় মাঠটি এখন পরিণত হয়েছে গো-চারণভূমিতে।
জানা গেছে, উপজেলা সদরে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয়করণ করা হয়। প্রায় ৯ একর কৃষিজ ও বাণিজ্যিক সম্পত্তির আয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উপার্জন অর্ধকোটি টাকারও বেশি। ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ইমরান আলী। পরে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম প্রধান অবসরে গেলে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে “দুর্নীতির আখড়া”য় পরিণত করার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, বিদ্যালয়ের কৃষিজ ও বাণিজ্যিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় সরকারি কোষাগারে জমা না করে বেসরকারি একটি ব্যাংক হিসাবে জমা করছেন ইমরান আলী এবং একক স্বাক্ষরে অর্থ উত্তোলন করছেন। সরকারী ব্যয় পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি করার কথা থাকলেও এখনো তা গঠন হয়নি।
এছাড়া, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েও নিজেকে “প্রধান শিক্ষক” হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন ইমরান আলী। এমনকি বিদ্যালয়ের অনার বোর্ডেও ‘ভারপ্রাপ্ত’ শব্দটি বাদ দিয়ে নিজের নাম লিখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি অর্থে সংস্কার করা একটি ভবনের রুমে ঠিকাদারদের সহযোগিতায় বসবাস শুরু করেছেন তিনি। সেখানে টেলিভিশন, ফ্রিজসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। যদিও সরকারি কোনো ভবনে বসবাস করলে বাড়িভাড়া কর্তনের নিয়ম আছে, কিন্তু তা মানা হচ্ছে না।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফিতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ৫৫ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কোচিং ফি হিসেবে দুই হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে অবাধে গরু-ছাগলের বিচরণ। মাঠে গবাদিপশুর বিষ্ঠা জমে দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানান, মাঠে চলাচলের সময় প্রায়ই পা পিছলে পড়ে যেতে হয়।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “গরু-ছাগলের বিষ্ঠা মাড়িয়ে ক্লাসে যেতে হয়। গোবরের গন্ধে খেলাধুলা করা তো দূরের কথা, চলাফেরাও কষ্টকর।”
সহকারী শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ আকতারুদ্দোজা বলেন, “ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিক্ষকদের সঙ্গে অনেক সময় অশালীন আচরণ করেন। নারী শিক্ষকরাও এ আচরণ থেকে মুক্ত নন।”
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক জানান, “প্রধান শিক্ষক এককভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। কোনো আর্থিক লেনদেনের হিসাব কাউকে দেন না। এমনকি পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র ফিও আত্মসাৎ করেছেন।”
অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী বলেন, “দূর থেকে আসি, তাই একটি রুম মুসাফির হিসেবে ব্যবহার করছি—এটা অপরাধ নয়। আমি কোনো সরকারি বাসায় থাকছি না, তাই বাড়িভাড়া কর্তনের প্রশ্নই আসে না। ডিসেম্বরে অডিট কমিটি গঠন করা হবে।”
রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক রোকসানা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের রুমে বসবাসের অনুমতি নেই। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল