চলমান জেন-জি বিক্ষোভ ও ক্রমবর্ধমান জনরোষের মুখে দেশ থেকে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি নিরিনা রাজোয়েলিনা। জানা গেছে, সোমবার তার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। তবে ভাষণের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তিনি ফরাসি সেনাবাহিনীর একটি বিমান করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। তিনি দুবাই যেতে পারেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার তিনি দেশ ছাড়েন ও সোমবার তার এই প্রস্থানের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা এমনটি দাবি করেছেন।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ এবং পদত্যাগের দাবিতে ক্রমবর্ধমান দাবির পর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার মাদাগাস্কারের রাজধানীতে কয়েকশ’ মানুষ উৎসব মেতে ওঠে। এতে যোগ দিয়েছেন সৈন্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
সাংবাদিকরা বলেছেন, আন্তানানারিভো সিটি হলের সামনের একটি চত্বরে মানুষ জড়ো হয়ে পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকে। কেউ কেউ সামরিক যানবাহন ঝুলিয়ে রেখেছিল।
তাদের মধ্যে ক্যাপস্যাট ইউনিটের সৈন্যরাও ছিলেন। রাজোয়েলিনাকে প্রথম ক্ষমতায় আনতে তারা ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। শনিবার ঘোষণা করেছে যে, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘গুলি চালানোর আদেশ প্রত্যাখ্যান করবে’।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেন্ডারমেরি অফিসাররা। যাদের প্রায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রায় প্রতিদিনের বিক্ষোভের সময় কঠোর কৌশল ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তারা একটি ভিডিও বিবৃতিতে তাদের প্রতিক্রিয়ায় ‘ত্রুটি এবং বাড়াবাড়ি’ স্বীকার করেছেন।
সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বিক্ষোভগুলো প্রাথমিকভাবে দরিদ্র দেশটিতে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ ও পানি বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীভূত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা একটি বৃহত্তর সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। সেখানে ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রথম দিনগুলোতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। কিছু নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা এবং অন্যরা অপরাধী দল এবং লুটেরাদের দ্বারা সৃষ্ট সহিংসতায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
রাজোয়েলিনা নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, গত সপ্তাহে ১২ জন নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে এবং এই ব্যক্তিরা সকলেই লুটেরা এবং ভাঙচুরকারী।
রাজোয়েলিনা বুধবার থেকে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। তিনি সপ্তাহান্তে বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের এই দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।
ফেসবুকে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
রাজোয়েলিনা পালিয়ে গেছেন এমন গুজবের মধ্যে তার সরকার শনিবার জানিয়েছে, তিনি মাদাগাস্কারে রয়েছেন এবং জাতীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করছেন।
আইনের ছাত্র ফিনারিত্রা মানিত্রা আন্দ্রিয়ানামেলাসোয়া (২৪) সিটি হলের সমাবেশে বলেছেন, আমরা আশা করি তিনি ক্ষমা চাইবেন এবং আন্তরিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। সেখানে বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী জেনারেল জেড আন্দোলনের একটি বিশাল পতাকা প্রদর্শিত হয়েছিল।
তিনি বলেছেন, পরে, আমরা নির্বাচন আয়োজনের কথা বিবেচনা করতে পারি এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার জন্য কে উপযুক্ত তা নির্ধারণ করতে পারি।
১৯ বছর বয়সী স্টিভেন রাসোলোনজানাহারিও পদত্যাগের প্রত্যাশা করছেন, আমরা ইতোমধ্যেই আশা করি প্রেসিডেন্ট সমস্ত মালাগাসি নাগরিকের কাছে ক্ষমা চাইবেন। কারণ, বিক্ষোভের সময় আমাদের অনেক হতাহত, আত্মীয়স্বজন আহত হয়েছে।
ক্যাপস্যাট ইউনিটের সৈন্যরা প্রথমে শনিবার একই স্কোয়ারে বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দিয়েছিল এবং রোববার নিহতদের জন্য প্রার্থনায় যোগ দিতে ফিরে এসেছিল।
তাদের মধ্যে জেন্ডারমেসের সাথে সংঘর্ষে নিহত একজন সৈনিকও ছিলেন।
বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করার জন্য প্রেসিডেন্ট গত মাসে তার সরকারকে বরখাস্ত করেছেন।
বিক্ষোভকারীদের একটি দাবি মেনে নিয়ে সিনেট রবিবার তার সভাপতি, জেন্ডারমেরি আধাসামরিক পুলিশের সাবেক জেনারেল রিচার্ড রাভালোমানানাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।
রবিবার সেনা সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল ডেমোস্থেন পিকুলাসের জন্য ক্যাপস্যাট মনোনীত ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ষেখানে সশস্ত্র বাহিনী মন্ত্রী মানান্তসোয়া ডেরামাসিনজাকা রাকোতোয়ারিভেলো উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেছেন, আমি তাকে আমার আশীর্বাদ জানাই, যাকে গত সপ্তাহে পুরো সরকার বরখাস্ত করার পর রাজোয়েলিনা নিয়োগ দিয়েছেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি
বিডি প্রতিদিন/একেএ