যুগপৎ আন্দোলনের বেশ কয়েকটি দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির কাছে আসন ছাড় চেয়ে তালিকা হস্তান্তর করেছে। যে কটি দল তালিকা দিয়েছে, তা এক করলে ২ শতাধিক আসনে দাঁড়ায়। এর বাইরে আরও কিছু দল রয়েছে যেগুলো এখনো কৌশলগত কারণে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই জোট করে ভোট করবে। এসব দল বিএনপির কাছে আসন ছাড়ের তালিকা পাঠালে দেখা যাবে এই তালিকা তিন শতাধিক হবে। ফলে বিএনপির কিছুই থাকছে না।
বিএনপি ও সমমনাদের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে কোন দল ও জোটকে বিএনপি কত আসন ছেড়ে দেবে। সমমনারা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসন চাইলে না-ও পেতে পারেন। বিএনপি সমমনাদের জন্য সর্বোচ্চ ৫০টি আসন ছাড় দিতে চায়। এতে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন নেতারা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২ আসন ও অন্যদের ৩৬ আসন ছাড় দেয় দলটি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের কত আসন ছাড়বে, সেটা আলোচনা ও বিবেচনার বিষয়। আমরা এমন আসনেই শরিকদের প্রার্থী দেব, যেসব আসনে জয়লাভের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।’
জানা যায়, ভোটের আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা করছে বিএনপি। সমমনা কয়েকটি দল ও জোট বিএনপির কাছে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক আসন দাবি করেছে। তবে কে কটি আসন পাবে, তা নিয়ে চলছে দরকষাকষি ও জোর আলোচনা। ঘোষিত সময় অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগেই প্রার্থী নির্ধারণ ও কৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আসন ভাগাভাগি ও সমন্বয়ের কাজ শেষ করতে চায় বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনাদের আসন ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। দলটি সমমনাদের ৫০টি আসন ছাড়ার চিন্তা করছে। একই সঙ্গে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী মাসের মধ্যেই দল ও সমমনাদের সঙ্গে এ বিষয়ে ফয়সালায় পৌঁছাতে চায় দলটি। প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।
জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত কয়েকটি দল ২১৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে দলটির কাছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮, ১২ দলীয় জোট ২১, এগারো দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৩, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫, গণফোরাম ১৫, লেবার পার্টি ৬ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ১০টি আসনে তাদের প্রার্থীর নাম দিয়েছে। তবে কৌশলের অংশ হিসেবে কোনো কোনো দল সরাসরি লন্ডনে দেখা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছে। মিত্রদের আসন ছাড় নিয়ে এখন চলছে দরকষাকষি ও আলোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের কটি আসন ছাড় দেবে বিএনপি, তা আগামী মাসের শুরুতেই জানা যাবে। যাদের ছাড় দেবে তাদের বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজসংকেত’ দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী মনোনয়নের যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষনেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইমলাম বাবলু বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত। আমাদের সারা দেশে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ১৩৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। শিগগিরই আমরা ৩০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করব। তবে আমরা বিএনপির কাছে আসন ছাড়ের বিষয়ে আজকালের মধ্যে ছোট আকারের তালিকা পাঠাব।’
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপিল পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আমরা ৯ জনের তালিকা বিএনপির কাছে পাঠিয়েছি। আমরা আওয়ামীবিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। তখন আওয়ামী লীগ আমাদের নানান অফার দিয়েছিল। আমরা তা ফিরিয়ে দিয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করে জেলজুলুমের শিকার হয়েছি। এখন বিএনপির আমাদের মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।’ তিনি জানান, সম্প্রতি তিনি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে তারেক রহমান জানিয়েছেন, আন্দোলনের সাথিদের মূল্যায়ন করা হবে। ড. ফরহাদ বলেন, জোটের প্রতিটি দল থেকে অন্তত একজনকে বিএনপির মূল্যায়ন করা উচিত।
এদিকে বিএনপির কাছে তালিকা পাঠানোর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ আরও বেশ কিছু দলের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এসব দলও যদি বিএনপির সঙ্গে এক হয়ে ভোট করে আর তারা নিজেদের জন্য বিএনপির কাছে আসন ছাড়ের তালিকা পাঠায় তাহলে দেখা যাবে কিছুই থাকছে না বিএনপির।