জাতিসংঘে বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপনের এক মাস না পেরোতেই তা নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমার।
দেশটির জান্তা সরকার জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের পূর্বের নিবাস রাখাইন রাজ্যে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। তবে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অন্য কোনো স্থানে বসতি গড়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে দেশটি। রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর সেখানে আর বসবাসের পরিবেশ নেই বলে মনে করে মিয়ানমার সরকার। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যাবে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অর্থবিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা খুব শিগগিরই রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যাবেন বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা কতটুকু ইতিবাচক হবে সেটা যাচাই করবে ইউএনএইচসিআর। কেননা শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠানো সঠিক হবে না বলেও মনে করে জাতিসংঘ। তবে সে কাজটা মিয়ানমার সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুতই শুরু করতে হবে। মিয়ানমার সব সময় এতে সময়ক্ষেপণ করে আসছে। আমরা আন্তর্জাতিকভাবেও জনমত জরিপের চেষ্টা করছি। প্রত্যাবাসন বিষয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখছি। যতদিন না রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে, ততদিন আমরা এই সংকটের কোনো টেকসই সমাধান দেখছি না।
এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ও চীনের অবস্থান এবং রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সংকট সমাধানে কতটা এগিয়ে আসছে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে আমরা নানানরকম উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিবেশী দেশগুলোকেও আমরা সক্রিয়ভাবে সঙ্গে থাকার কথা বলে আসছি। রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তৈরি করতে ভারত ও চীনের অবস্থানও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তিনি মনে করেন। এদিকে খোদ জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দেওয়ার আট মাস পরও এ আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে এ নিয়ে সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপনের এক মাসের মাথায় উল্টো তা নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমার। অন্যদিকে রোহিঙ্গা খাতের খরচ সামলাতেও বেকায়দায় পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি। উলটো এই আট মাসে আরও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে বলপূর্বক বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।