মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিংবাণিজ্য বন্ধসহ আট দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্বজনরা। স্কুল সংলগ্ন মেট্রো স্টেশন ডিপোর সামনে গতকাল এ মানববন্ধন করেন তারা। সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া মানববন্ধনে ‘ফুলগুলো সব পুড়ল কেন, জবাব চাই, বিচার চাই’; ‘ফুল পাখি সব পুড়ল কেন, জবাব চাই, বিচার চাই’; ‘বাচ্চাগুলো পুড়ল কেন, জবাব চাই, বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। এ সময় স্বজনদের অনেকের চোখ ছলছল করছিল। অভিভাবকদের অনেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ করেন। স্বজনদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করা, সারা দেশে মাইলস্টোন স্কুলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিংবাণিজ্য বন্ধ করা, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিহত বাচ্চার জন্য ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) ও প্রতিটি আহত বাচ্চার জন্য ১ কোটি টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া স্কুলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহত বাচ্চার জন্য ২ কোটি এবং প্রতিটি আহত বাচ্চার জন্য ১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে, রানওয়ে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করতে হবে, কোচিং ব্যবসার মূলহোতা স্কুল শাখার প্রধান শিক্ষিকাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিচার করতে হবে, স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাতে হবে ও বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণব্যবস্থা জনহীন স্থানে করতে হবে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিহত তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সায়মা আক্তারের মা রীনা আক্তার বলেন, মেয়ে বলেছিল-মা কোচিং না করলে মিস আদর করে না। আমি মেয়েকে কোচিংয়ে দিলাম। কোচিংয়ের কারণে আমার মেয়ে মারা গেল। এই কোচিং মেয়ের সর্বনাশ করল। সানজিদা নামের এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, স্কুল আমাদের বাচ্চাদের ফ্রিতে পড়াশোনা করানোর লোভ দেখাচ্ছে। আমরা এই স্কুল বন্ধ চাই। আমার ভাইয়ের মেয়ে মারা গেছে। আমি বিদেশ থেকে এসে লাশ দেখতে পারিনি। এর বিচার না হলে দরকার হলে বিদেশ থেকে মানবাধিকারের লোক আনব। নিহত উম্মে আফিয়ার মামা সাব্বির বলেন, দুর্ঘটনার পর অনেক দিন হলো। কিন্তু এ ঘটনার কী তদন্ত হলো, কী বিচার হলো আমরা জানতে পারিনি।
জোর করে কোচিং করানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি-মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ : গতকাল মানববন্ধনের পর মাইলস্টোন কলেজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দুর্ঘটনার ক্ষত মুছে ৬ আগস্ট থেকে স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি কাউন্সিলিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা করছে মাইলস্টোন স্কুল শাখা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছাত্রছাত্রীদের নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এখানে জোর করে কোচিং করানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রয়োজনে রিকোভারি বা বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমে পাঠ সম্পন্ন করা হয়। মূলত যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার দিনের হতাহত শিশুরা ছিলেন ক্লাস শেষের খেলাধুলা, গল্প আড্ডারত। কেউ কেউ অপেক্ষা করছিল অভিভাবক কখন এসে তাদের নিয়ে যাবে। বাস্তবে জোর করে আটকে রাখার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।