কাঁধ ব্যথা কমন একটি সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাঁধ ব্যথাকে আমরা ফ্রোজেন শোল্ডার বলে অভিহিত করে থাকি। কিন্তু কাঁধ ব্যথা ফ্রোজেন শোল্ডার ছাড়া অন্যান্য অনেক কারণে হতে পারে। এ বিষয়টি বুঝতে কাঁধের গঠন ও রোগের উপসর্গগুলো জানা জরুরি।
কাঁধের গঠন : আমাদের কাঁধের গঠন কিন্তু বেশ জটিল। মোট চারটি সন্ধি বা জয়েন্ট নিয়ে কাঁধ গঠিত। এর মধ্যে একটি সন্ধি যাকে গ্লেনো হিউমেরাল জয়েন্ট বলে, তা বেশ বড় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাকি তিনটি সন্ধি ছোট হলেও এগুলোও কাঁধের নড়াচড়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে কাঁধে সন্ধি ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু লিগামেন্ট, ক্যাপসুল আর এসব কিছুই মাংসপেশি দ্বারা আবৃত।
কাঁধ ব্যথার কারণগুলো কী কী : কাঁধ ব্যথার কারণগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এর একটি হলো অভ্যন্তরীণ কারণ, অন্যটি হলো বহিরাগত। বহিরাগত কারণগুলোর মধ্যে ঘাড়ের সমস্যা, ফুসফুসের টিউমার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ব্যথাগুলো কাঁধের বাইরে থেকে কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে বলে এদের বহিরাগত সমস্যা বলা হয়। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর কারণেই সবচেয়ে বেশি কাঁধ ব্যথা হতে দেখা যায়। অভ্যন্তরীণ কারণ দুই ভাগে বিভক্ত। যার একটির উৎপত্তিস্থল হলো ছোট সন্ধিগুলো বা আশপাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্ট। অন্য কারণগুলো আসে বড় জয়েন্ট থেকে।
ফ্রোজেন শোল্ডার কী : কাঁধের নাড়াচাড়ার জন্য এর সবচেয়ে বড় সন্ধিটি বেশি কাজে লাগে। এ বড় সন্ধিতেই তৈরি হয় এডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বা ফ্রোজেন শোল্ডার। সহজ ভাষায় বললে বড় জয়েন্ট বা গ্লেনোহিউমেরাল জয়েন্ট ঘিরে যে ক্যাপসুল থাকে তাতে যদি প্রদাহ সৃষ্টি হয় তা থেকেই মূলত ফ্রোজেন শোল্ডার হয়ে থাকে। তবে বড় জয়েন্টে ব্যথার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো জয়েন্টের হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিও আর্থ্রাইটি।
কীভাবে ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে অন্য কারণগুলো আলাদা করা যায় : ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে অন্য কাঁধ ব্যথা আলাদা করা কঠিন নয়। ফ্রোজেন শোল্ডারের মূল লক্ষণ হলো রোগী তার হাত পাশে বা সামনে-পেছনে নাড়াতে পারে না। কোমরে হাত দিতে বা পিঠ চুলকাতে কষ্ট হয়। এ রোগীরা অন্যের সাহায্য নিয়েও হাত ওপরে তুলতে পারেন না। কিন্তু কাঁধ ব্যথার অন্য কারণগুলোতে সাধারণত রোগীরা কমপক্ষে অন্যের সাহায্য নিয়ে হাত ওপরে তুলতে পারেন। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ কারণ নির্ণয়ে শোল্ডারের এমআরআই করা হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে ঠিক কোনো স্থানটি আক্রান্ত তা জানা যায়।
কী চিকিৎসা আছে : কাঁধ ব্যথার চিকিৎসা সহজ নয়। অনেকেই যে কোনো কাঁধ ব্যথাকে ফ্রোজেন শোল্ডার মনে করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন যা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন; রোটেটর কাফ মাসলের ক্ষয়ের কারণে যদি কারও কাঁধ ব্যথা হয় এবং তাকে বল প্রয়োগে ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করানো হয় তবে ব্যথা ভালো না হয়ে উল্টো মাংসপেশি ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসা শুরুর আগে সুনিশ্চিত হতে হবে যে কাঁধ ব্যথার সঠিক উৎস কোনটি এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
ফিজিওথেরাপি, স্টেরয়েড ও সার্জারি : ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি খুব ভালো কাজ করে। ইলেকট্রোথেরাপি সমেত থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ও ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে লোকাল স্টেরয়েডও ক্যাপসুলের প্রদাহ দ্রুত কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রোটেটর কাফ সিনড্রোমেও ফিজিওথেরাপি ভালো কাজ করে। তবে মারাত্মক আকারের হাড় ক্ষয় থেকে যদি কাঁধ ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে অনেক সময় সার্জারি লাগতে পারে।
পরামর্শ : যেসব রোগীর কো-মরবিডিটি আছে অর্থাৎ যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বৃক্কের রোগ বা লিভারের রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য চিকিৎসা প্রয়োগে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। যেমন : ডায়াবেটিস আক্রান্ত ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর ক্ষেত্রে লোকাল স্টেরয়েড কাজ করে না, সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপির পরিকল্পনা প্রয়োজন হয়। সুতরাং কাঁধের ব্যথা নিয়ে অবহেলা নয়।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ