আইবিডি বা ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ অন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে, ক্রোনস ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। ক্রোনস ডিজিজ মুখগহ্বর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তবে আলসারেটিভ কোলাইটিস কেবল বৃহদন্ত্রেই হয়। আলসারেটিভ কোলাইটিসের প্রদাহ অন্ত্রের (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট) অভ্যন্তরীণ আস্তরণে থাকে, যেখানে ক্রোনস ডিজিজের প্রদাহ অন্ত্রের পুরো প্রাচীরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি এক লাখ মানুষের ৪১০ জন ক্রোনস ডিজিজ এবং প্রতি এক লাখ মানুষের ৪১৪ জন আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে আক্রান্ত। আইবিডি রোগটির সঠিক কারণ জানা নেই। তবে বলা হয় যে জেনেটিক ও পরিবেশগত কিছু কারণ এর পেছনে কাজ করে। যাদের পরিবারে (পিতা-মাতা, ভাই বা বোন) এ ধরনের রোগ আছে তাদের আইবিডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আইবিডি ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে ক্রোনস ডিজিজ হওয়ার প্রবণতা বেশি।
উপসর্গ : আলসারেটিভ কোলাইটিস হলে দীর্ঘ দিন ধরে রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে। তার সঙ্গে মাঝে মধ্যে তলপেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, মলদ্বারে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। ব্যথার ওষুধ এবং সংক্রমণ (বিশেষ করে উপরের শ্বাসনালি এবং অন্ত্রের সংক্রমণ) লক্ষণগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। ক্রোনস ডিজিজের উপসর্গ হলো পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানাও হতে পারে। জটিলতা হিসেবে খাদ্যনালি সরু হয়ে পেট ফুলে যেতে পারে, খাদ্যনালি ও মলদ্বারে ফিস্টুলা হতে পারে। রোগীর রক্তশূন্যতা, অপুষ্টি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, শরীরে পানি আসতে পারে। আইবিডিতে পরিপাকতন্ত্রের বাইরেও কিছু উপসর্গ যেমন মুখে ঘা, গিরা ব্যথা ও ফোলা, চোখে ও ত্বকে প্রদাহ ইত্যাদি হতে পারে। ক্রোনস ডিজিজে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজনের গুরুতর লক্ষণ থাকতে পারে।
রোগ নির্ণয় : রোগের উপসর্গ ও ইতিহাস সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলে কিছু রক্ত পরীক্ষা (রক্তের সিবিসি, ইএসআর, সিআরপি, অ্যালবুমিন), মলের কিছু পরীক্ষা (ক্যালপ্রোটেকটিন), কোলনস্কপি, আইলিওস্কপি, এন্টেরোস্কপি, টিস্যু বায়োপসি পরীক্ষা, বেরিয়াম এক্স-রে, এমআর এন্টারোগ্রাফি ইত্যাদি দরকার হতে পারে। কখনো কখনো সার্জারির পর টিস্যু পরীক্ষার মাধ্যমে ক্রোনস ডিজিজ ধরা পড়ে।
চিকিৎসা : আইবিডি দীর্ঘমেয়াদি রোগ হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শুরুতেই রোগ নির্ণয় করা গেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। এর ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা ও জটিলতা কমানোও সম্ভব হয়। তাই এসব নিয়ে অবহেলা করা টিক নয়।
লেখক: আইবিডি ক্লিনিক কো-অর্ডিনেটর, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ