হাল জামানায় কিছু মানুষকে স্পষ্ট হারাম বিষয়ে সফলতার জন্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শোনা যায়। উদাহরণস্বরূপ—কোনো গায়কের গান খুব ভালো চলছে। ইউটিউব, ফেসবুকে আর টিকটকে ট্রেন্ডিংয়ে আছে। অল্প দিনে অনেক মানুষ সেটা শুনেছে।
এটার জন্য তাকে প্রেস ব্রিফিংয়ে গর্বের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আমি সফল হয়েছি। শেষে এই কাজ যেন চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য দোয়াও চাওয়া হয়। আবার অনেককে ভবিষ্যতে গুনাহর কাজ সংঘটনের ইচ্ছায় ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে শোনা যায়। যেমন কারো ভবিষ্যতে সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা আছে।
সে ইচ্ছা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি গর্বের সঙ্গে বলছেন, ইনশাআল্লাহ! সামনে আমরা এই সিনেমা নিয়ে কাজ করব। প্রশ্ন হচ্ছে, গুনাহের কাজের সফলতার জন্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কিংবা ভবিষ্যতে গুনাহের কাজ করার ইচ্ছায় ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার হুকুম কী?
ইনশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি বলার ক্ষেত্র
একজন মুসলিম হিসেবে জেনে রাখা উচিত কোথায় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হবে আর কোথায় ‘ইনশাআল্লাহ’। কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি বোঝাতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হবে। যার অর্থ সব প্রশংসা আল্লাহর। ভবিষ্যতে ভালো কোনো কাজ করার মানসে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা ইসলামের বিধান।
অপব্যবহারে বেঈমান হওয়ার আশঙ্কা!
আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি ইসলামিক পরিভাষা। এগুলো শুধু উচ্চারণসর্বস্ব কোনো পরিভাষা নয়, বরং এসব বাক্য ইসলামের নিদর্শন। এগুলোর সম্মান করা ঈমানের চিহ্ন ও আলামত, অন্তরের তাকওয়ার বিষয়। সুরা হাজে আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করবে সেটা তার হৃদয়ের তাকওয়াপ্রসূত।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)। ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোর অসম্মান করা। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা গুনাহর কাজ। এর কারণে ব্যক্তির ঈমানহারা হওয়ার আশঙ্কা আছে।
হারাম বিষয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাও হারাম
তাফসিরে রুহুল মায়ানিতে এসেছে, হারাম ও মাকরুহ বিষয়ে বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ ইত্যাদি বলা উচিত নয়। বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, যদিও তা কুফুরি নয়; কিন্তু হারাম বিষয়ের জন্য বিসমিল্লাহ বা আলহামদুলিল্লাহ বলা হারাম। মাকরুহ বিষয়ে বলা মাকরুহ। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ১/৭০)। এটা স্পষ্ট যে ইসলামে গানবাজনা ও বাদ্যযন্ত্র হারাম। তেমনি নাটক, সিনেমাও হারাম এবং নিষিদ্ধ কাজ। এগুলো বিষয়ে সফলতার জন্য আলহামদুলিল্লাহ কিংবা ইনশাআল্লাহ বলা হারাম কাজ।
তুচ্ছতাচ্ছিল্যের উদ্দেশ্যে আলহামদুলিল্লাহ বলা
যদি কেউ ইসলামিক এসব পরিভাষাকে ছোট করার নিয়তে এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা উদ্দেশ্যে বলে থাকে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। তাফসিরে রুহুল মাআনিতে এসেছে, ‘আল্লাহ মাফ করুন! যদি কেউ ইসলামিক বিধানকে ছোট করার মানসে এমনটা বলে থাকে তাহলে তা কুফুরি বলেই গণ্য হবে।’ (রুহুল মাআনি : ১/৭০)। এই শব্দগুলো উচ্চারণের ক্ষেত্রে আমাদের সজাগ ও সতর্ক হওয়া উচিত।
লেখক : খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ, রংপুর।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ