শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

রাজধানীতে দুর্লভ পাখি বাঁশঘুঘু

মোস্তফা কাজল

রাজধানীতে দুর্লভ পাখি বাঁশঘুঘু

রাজধানীর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে দেখা মিলেছে দুর্লভ পাখি বাঁশঘুঘুর। গত বুধবার বিকালে এ পাখির দেখা মেলে। এতে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী এবং পাখি শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দারুণ খুশি। এ উদ্যানের প্রবীণ মালি আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি দিনের মতো গতকালও হেঁটে হেঁটে নতুন পাখি খুঁজছিলাম। কিছু দূর এগোতেই হঠাৎ দেখলাম বনের নিচু ডাল থেকে সবুজ একটা পাখি দ্রুত উড়ে গেল। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাখিটিকে আগেও অনেকবার একই ভঙ্গিমায় উড়তে দেখেছি। সবুজ এই পাখির নাম বাঁশঘুঘু বা সবুজ ঘুঘু। তবে গ্রাম-গঞ্জে বাঁশঘুঘু নামেই বেশি পরিচিত। বাঁশবন বা বাঁশঝাড়ে বেশি দেখা যায় বলেই এ নাম। আবার কোথাও কোথাও এদের পাতি শ্যামাঘুঘুও বলা হয়। এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘুর মধ্যে এ পাখিই সবচেয়ে সুন্দর। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাঁশঘুঘু লম্বায় ২৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। এদের ডানা ও পিঠ সবুজ। পিঠের নিচের অংশে দুটি সাদা দাগ রয়েছে। দাগ দুটির মাঝখানে আছে একটি কালো দাগ। পুরুষ ঘুঘুর দেহের ওপরের অংশ চকচকে পান্না সবুজ। মাথা ধূসর। কপাল, থুঁতনি ও ভ্রু সাদা। কাঁধের ওপর ছোট সাদা দাগ আছে। লেজ ও ডানার উড়ার পালক কালচে। মাথার দুই পাশ ও দেহের নিচের অংশ সুন্দর লালচে বাদামি বা গোলাপি। স্ত্রী ঘুঘু দেখতে পুরুষ পাখির মতো হলেও মাথা, থুঁতনি ও কাঁধের ওপরের অংশ বাদামি। কপাল ও ভ্রু ধূসর। নিচের অংশ গাঢ় বাদামি। উভয়ের ঠোঁট উজ্জ্বল লাল বা গোলাপি লাল। পা ও নখ গোলাপি।

বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটি ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে। দৃষ্টিনন্দন বাঁশঘুঘু মূলত পাতাঝরা, চিরসবুজ শালবন ও বাঁশবনের বাসিন্দা। সুন্দরবনে এ পাখি অনেক দেখা যায়। সিলেটের বিভিন্ন বনেও এদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। একসময় গ্রামে গ্রামে দেখা গেলেও বর্তমানে এদের তেমন একটা দেখা যায় না। বাঁশঝাড়, ঝোপ-জঙ্গল কমে যাওয়ায় এবং শিকারিদের দাপটই এর মূল কারণ। বাঁশঘুঘু একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকতে বেশি পছন্দ করে। এরা গাছ বা বাঁশঝাড়ের তলায় হেঁটে হেঁটে শস্যদানা, ফল, বীজ ও উইপোকা খায়। বনের ধারে নির্জন খোলা জায়গায় কিংবা রাস্তার ধারে খুব ভোরে, ভরদুপুরে বা সন্ধ্যার আগে এরা খাবার খেতে নামে। মানুষকে এরা বেশ ভয় পায় এবং এড়িয়ে চলে। বনের ভিতরে খুব কম উচ্চতায়ও বেশ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। এদের গলার স্বর বেশ নরম। এ ছাড়া এ পাখি ‘হু-হু-হুন’ স্বরে ডাকে। বছরজুড়ে প্রজনন করতে পারলেও সাধারণত বর্ষার আগেই প্রজননের কাজ সারে। ছোট গাছ, বাঁশঝাড় বা ঝোপ-ঝাড়ে বেশকিছু কাঠিকুটি জড়ো করে ছোট্ট ও অগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রী ঘুঘু ঘিয়ে বা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা হতে সময় লাগে প্রায় ১২ দিন।

সর্বশেষ খবর