চার চারটি হাফ সেঞ্চুরি। প্রথমে বাঁ হাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম। এরপর সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক এবং সবশেষ দুজন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। এ চার ব্যাটার গতকাল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন ব্যাট হাতে রাঙিয়েছেন। খেলেছেন হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস। চারজনের হাফ সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৩১৬ রান তুলে তৃতীয় দিন পার করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ১৩২ রানে পিছিয়ে আজ চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন ৫৫ রানে অপরাজিত মুশফিক এবং ৫২ রানে অপরাজিত লিটন। দুর্ভাগ্য সাদমানের। নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়ে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি। আউট হন ৯৩ রানে। মুমিনুল খেলেন ৫০ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস। ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিগত ১৫ রানে সফট ডিসমিসাল হন বাঁ হাতি স্পিন অলরাউন্ডার।
সাদমান সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন ২০২২ সালের মার্চে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মার্চে। এরপর লম্বা বিরতি শেষে ১৭ মাস পর জাতীয় দলে ফিরেন। এবারও খেলার সুযোগ হয়তো পেতেন না। যদি না গ্রোইনের ইনজুরিতে পড়তেন ছন্দে থাকা মাহামুদুল হাসান জয়। তার জায়গায় সুযোগ পেয়েই ব্যাটিংয়ে দলকে রাঙান সাদমান। ওপেনার জাকির হাসানকে নিয়ে ৩১ রানের জুটি গড়েন। ব্যক্তিগত ১২ রানে জাকির সাজঘরে ফেরেন নাসিম শাহের বাউন্সারে ঠিকমতো খেলতে না পেরে। দলীয় ৫২ রানে পরিষ্কার বোল্ড হন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল। খুররম শাহজাদের ভিতরে আসা বল ঠিকমতো খেলতে ব্যর্থ হয়ে ব্যক্তিগত ১৬ রানে বোল্ড হন টাইগার অধিনায়ক। দুজনের বিদায়ের পর সাদমান তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক মুমিনুলের সঙ্গে। জুটিতে ৯৪ রান যোগ করেন। খুররমের বলে বোল্ড হন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল ব্যক্তিগত ৫০ রানে। ৭৬ বলে ৫ চারে ৬২ টেস্টে ১৯তম হাফ সেঞ্চুরি করেন। মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে সর্বশেষ ইনিংসেও ৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। মুমিনুলের বিদায়ের পর সাদমান জুটি বাঁধেন দলের সবচেয়ে সিনিয়র ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজনে যোগ করেন ৫২ রান। সাদমান যখন ১৪ টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন, তখনই মোহাম্মদ আলির বলে আলতো পুশ খেলতে যেয়ে বোল্ড হন। স্কোর বোর্ডে তার নামের পাশে তখন লেখা ৯৩ এবং দলের স্কোর ১৯৯ রান। ১৮৩ বলে ১২ চারে সাজানো ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। সাদমানের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে আসেন আরেক সাবেক অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু খুব বেশি সময় টিকতে পারেননি। অস্থিরতায় ভরা ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ২ চারে ১৫ রান করে শর্ট কাভারে পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদের সহজ ক্যাচ হন অকেশনাল অফ স্পিনার সাইম আইয়ুবের বলে।
আঙুলের ইনজুরির জন্য গত মার্চে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলেননি। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন গত বছর ডিসেম্বরে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম চার দিনের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ফিল্ডিংয়ে আবারও আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলেন। কিন্তু টেস্ট খেলতে সমস্যা হয়নি। গতকাল অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে। ৮৯ টেস্ট ক্যারিয়ারে এটা তার ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি। ইনিংসটি খেলে তিনি বাংলাদেশের আরেক সাবেক অধিনাযক তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ মিলিয়ে ১৫ হাজারের ওপর রান করেন। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে তামিম গত বছরের মার্চে এই কীর্তি গড়েছিলেন। এবার গড়লেন মুশফিক। তামিমের রান ১৫২৪৯। মুশফিকের রান ১৫০২৩। ১২২ বলের ইনিংসটিতে ৭টি চার মেরেছিলেন। হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন। ৪২ টেস্টে ১৭তম হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে অপরাজিত রয়েছেন ৫২ রানে। ৫৮ বলের ইনিংসটিতে রয়েছে ৮টি চার ও একটি ছক্কা। ফাস্ট বোলার নাসিম শাহের এক ওভারে ৩ চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান নেন। ছক্কাটি আবার হুক খেলে স্টেডিয়ামের বাইরে আছরে ফেলেন। লিটন ও মুশফিক ষষ্ঠ উইকেটে ৯৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিন উইকেটের পতন হয় দুটি। দ্বিতীয় দিন চারটি। গতকাল তৃতীয় দিন পতন পাঁচটি। তিন দিনে উইকেটের পতন হয়েছে ১১টি এবং রান হয়েছে ৭৬৪। সেঞ্চুরি দুটি এবং হাফ সেঞ্চুরি পাঁচটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : প্রথম ইনিংস : ৪৪৮/৬ (ডিক্লে)
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, (আগের দিন ২৭/০) ৩১৬/৫, ৯২ ওভার (সাদমান ইসলাম ৯৩, জাকির হাসান ১২, নাজমুল হোসেন শান্ত ১৬, মুমিনুল হক ৫০, মুশফিকুর রহিম ৫৫*, সাকিব আল হাসান ১৫, লিটন দাস ৫২*। শাহিন আফ্রিদি ১৮-৩-৫৫-০, নাসিম শাহ ২০-৪-৭৭-১, খুররম শাহজাদ ১৯-৩-৪৭-২, মোহাম্মদ আলি ১৫-২-৪২-১, আগা সালমান ১৫-১-৫৩-০, সাইম আইয়ুব ৫-১-২৩-১)।