কানপুর টেস্টে টানা দুই দিন খেলা বন্ধ থাকার পর গতকাল শুরু হয়েছে ব্যাট-বলের লড়াই। প্রথম দিনে খেলা হয়েছিল মাত্র ৩৫ ওভার। আড়াই দিনেরও বেশি খেলা না হওয়ায় টেস্টের ফলাফল অনেকেই ড্র আশা করেছিলেন। তবে গতকাল টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুত রান তোলার রেকর্ড গড়ে টেস্টের গতিপথ অনেকটাই বদলে দিয়েছেন জয়সোয়াল আর রাহুলরা। আজ শেষ দিনে কী হবে এখনই আন্দাজ করা বেশ কঠিন।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে ৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে। ভারতীয় বোলাররা একের পর এক উইকেট শিকার করতে থাকেন। তবে এক পাশ আগলে রাখেন মুমিনুল হক। তিনি ধীরে ধীরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান। ১৯৪ বলে করেন ১০৭* রান। ১৭টি চার ছাড়াও একটি ছক্কা হাঁকান মুমিনুল। ক্যারিয়ারে এটা তার ১৩তম টেস্ট সেঞ্চুরি। দেশের বাইরে এর আগে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল। নিঃসঙ্গ শেরপার মতোই খেলে গেলেন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসে গতকাল বাকি ব্যাটারদের মধ্যে মিরাজ করলেন ২০। বাকিরা কেউ এর বেশি এগোতে পারেননি। মুমিনুল ২০১৩ সালে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর একে একে তিনি শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুমিনুল। গতকাল কানপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ২৩৩ রান সংগ্রহ করে প্রথম ইনিংসে।
নিজেদের প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে ভারত বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে। ৩ ওভারে ৫১ রান করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তারা। টেস্টে এটাই দ্রুততম দলগত ফিফটি। এরপর ১০.১ ওভারে ১০০ রান করে আরও একটা রেকর্ড গড়ে ভারত। আগের রেকর্ডটিও তাদেরই ছিল। ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২.২ ওভারে ১০০ করেছিল তারা। ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩.২ ওভারে ১০০ রান করে রেকর্ড গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। তারা এবার তিন নম্বরে নেমে গেল। ১৮.২ ওভারে ১৫০ রান করে আরও একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ভারত। ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১.১ ওভারে ১৫০ করেছিল ভারতই। ২০০ রান করার দিক দিয়েও ভারত দ্রুততম দল হয়ে যায় (২৪.২ ওভার)। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনিতে ২৮.১ ওভারে ২০০ করে রেকর্ড গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই রেকর্ডটা এখন রোহিত শর্মাদের। শেষ পর্যন্ত ৩৪.৪ ওভারে ৮.২২ গড়ে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এ ইনিংসে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন জয়সোয়াল। এ ছাড়া রাহুল ৬৮ ও কোহলি ৪৭ রান করেন। বল হাতে মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সাকিব আল হাসান রানের গতি থামাতে না পারলেও উইকেট শিকার করেছেন চারটি করে। ৪১ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। সাকিব ৭৮ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। কিছুদিন আগেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলেই সাদা পোশাক তুলে রাখতে চান তিনি। তবে এখনো পর্যন্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাকিবের দেশে ফেরাটা অনিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে কানপুর টেস্টই হতে পারে সাকিবের শেষ টেস্ট। যদি তাই হয়, তবে ম্যাচটা বল হাতে রাঙিয়েই রাখলেন তিনি। শুভমন গিল, ঋষভ পন্ত, বিরাট কোহলি আর অশ্বিনের মতো উইকেটগুলো শিকার করে স্মরণীয় করে রাখলেন কানপুর টেস্ট।
গতকাল শেষ বিকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান করেছে বাংলাদেশ। এখনো ২৬ রানে পিছিয়ে নাজমুলরা। উইকেটে আছেন সাদমান (৭) ও মুমিনুল (০)। জাকির ১০ রান ও হাসান ৪ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। ইনিংসটা বড় করতে পারলে ড্রয়ের সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের।