শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বপ্ন সম্ভাবনা ও প্রাপ্তির পদ্মা সেতু

ফরিদা ইয়াসমিন

স্বপ্ন সম্ভাবনা ও প্রাপ্তির পদ্মা সেতু

সব বাধা ও ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে বাস্তবায়িত হয়েছে এ দেশের মানুষের স্বপ্ন পদ্মার বুকে সেতু। আজ বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দৃঢ়তার গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মার বুকে ব্যয়বহুল এই সেতু তৈরির সফলতা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক। বাঙালি আবারও দেখিয়ে দিল এ জাতি মাথা নোয়াবার নয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণের কাহিনি যেন গল্পকেও হার মানায়। ২০১১ সালে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। অর্থ ছাড়ের আগেই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো তাদের ঋণচুক্তি প্রত্যাহার করে। ২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এটি ছিল বিরাট সাহস ও চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সেতু নির্মাণে অর্থ-সহযোগিতায় দেশবাসীও তাদের সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে এসেছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে তহবিলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিছু ষড়যন্ত্রকারী ছাড়া সর্বস্তরের মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাই প্রধানমন্ত্রী নির্দ্বিধায় বলেন, জনগণের শক্তিই হচ্ছে তাঁর শক্তি।

অন্যদিকে বিএনপিপ্রধান বেগম খালেদা জিয়াসহ একশ্রেণির রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয় বলে নানা সমালোচনা করেন। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রচারণার মুখে তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। যদিও পরবর্তীতে কানাডার আদালতে ও দুদকের তদন্তেও সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, সাহস আর সঠিক দিকনির্দেশনায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর উন্নয়ন কাজের মহাযজ্ঞ। বৈরী আবহাওয়া, নদীতে তীব্র স্রোত, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার প্রভাব আর ষড়যন্ত্র সবকিছুকে শক্তভাবে মোকাবিলা করে কাজের গুণগত মানের আপস না করে নির্মিত হয়েছে আজকের এই পদ্মা সেতু।

আজ ২৫ জুন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ যেন বাঙালির স্বাধীনতা-পরবর্তী আরেক বিজয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ তার সক্ষমতার প্রমাণ দেখিয়েছে। এই সেতু চালুর ফলে সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সরাসরি রাজধানীর যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, দেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কের বড় একটি সংযোগ পদ্মা সেতু। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো পদ্মা সেতু। সবকিছুই বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে।

সব ষড়যন্ত্র আর বিদেশি রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ়তা আর সাহস দেখিয়েছেন। এখানেই শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। তিনি আরেকবার প্রমাণ করেছেন তিনি জাতির পিতার কন্যা।

লেখক : সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব।

সর্বশেষ খবর