রংপুরের দুই উপজেলায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় ঝলসে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। পীরগাছা প্রায় ১৭ একর এবং পীরগঞ্জে ৩৬ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী কৃষক। তবে কোনো কোনো ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হলেও জমির ফসল পুড়ে যাওয়া রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রংপুরের পীরগাছার অন্নদানগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামের এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটার উত্তর পাশের জমিগুলোতে ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবাসিক এলাকার কৃষি জমির উপর স্থাপিত এমএসবি ব্রিকস নামের ওই ইটভাটার কারণে স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ১৭ একর জমির ধান ঝলসে গেছে। ওই ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৩০ জন কৃষকের আবাদি জমির ধানসহ বিভিন্ন ফলের গাছের ক্ষতি হয়েছে। কিছু ধান ক্ষেতের শীষ ঝলসে গিয়ে চিটা হয়ে গেছে এবং কিছু জমির ধান গাছগুলো জ্বলে যাওয়ায় কালো হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাদশা মিয়া বলেন গত তিন বছর ধরে ঘরের ধানের ভাত খেতে পারেন না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে। ধানের শীষ বের হলেই ইটভাটা মালিক ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাদের ক্ষতি করছে। এত যত্নে করা ফসল নষ্ট হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা। এ বছর কি খাবেন, কিভাবে চলবেন সেই চিন্তায় অস্থির। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মদন কুমার, সুরেশ চন্দ্র, দ্বীননাথ, নিখিল চন্দ্র, ইউসুফ আলী, রওশন, সিদ্ধার্থ, রঞ্জিত, সুশান্ত, আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। প্রতিবছর ধান পুড়ে যাবে,আর তারা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে পার পেয়ে যাবে। এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আপাতত ইটভাটার কারণে জমিগুলোর এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইটভাটা ম্যানেজার মোনা চন্দ্র বর্মন বলেন, ক্ষতির বিষয়টি জানি। বিষয়টি সমাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অফিস প্রধান) কমল কুমার বর্মন জানান, তদন্ত করে ওই ভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন ইটভাটায় কৃষকের জমির ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা ইটভাটা মালিককে ডেকেছিলাম। তারা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে রংপুরের পীরগঞ্জে বিষাক্ত ইটভাটার কালো ধোয়ায় ৮০ জন কৃষকের ৯ হেক্টর উঠতি বোরো ফসলের জমির ধান পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের ৩০০ মিটার পর পর আব্দুস সালামেরসহ ৩ টি ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়া ও গ্যাস নির্গত হয়ে শিবপুর গ্রামের জোনাব আলীর পুত্র মাহবুব মিয়ার ৪৫ শতক, মিটারপাড়া গ্রামের মৃত সমেস উদ্দিনের পুত্র আ. গফুর মিয়ার ৫৪ শতক, শিবপুর গ্রামের কোব্বাছ আলীর পুত্র বুলু মিয়ার ২৭ শতক, একই গ্রামের মজিবর রহমানের পুত্র রুবেল মিয়ার ৪৫ শতক, কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র সিয়াম মিয়ার ২১ শতকসহ তিনটি গ্রামের প্রায় ৪০ জন কৃষকের ৩৬ বিঘা জমির আধা পাকা ধান ঝলসে গেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে, কৃষি অফিসার পরিদর্শন করে মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার এবং আশরাফুল আলমকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক আব্দুস ছালাম কৃষকদের জমির ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম জানান, ইতিমধ্যেই অবৈধ কয়েকটি ইটভাটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল