রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম কেনাবেচায় ‘ঢলন’ প্রথা বাতিলের দাবিতে কৃষক, আড়তদার ও প্রশাসনের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে টানাপোড়েন চলছিল। যুগের পর যুগ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে এক মণ আমের ওজন ৪২ থেকে ৫৫ কেজি পর্যন্ত ধরা হতো; অথচ দাম দেওয়া হতো ৪০ কেজি ধরে। প্রশাসনের নানা উদ্যোগেও এ অনিয়ম বন্ধ হচ্ছিল না। সমস্যা নিরসনে গত ২৮ এপ্রিল বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনার পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু সাড়া না পেয়ে ৪ জুন কৃষক ও আড়তদাররা কমিশনার কার্যালয়ে যান। পরদিন বিভাগের চার জেলার আম ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জাত, গ্রেড ও গুণগত মান অনুযায়ী কেজি দরে আম বিক্রি হবে এবং কোনো কমিশন নেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে আড়তদাররা ৪০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনা বন্ধ করে দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে রাজশাহী বিভাগীয় আম আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ৪০ কেজিতে মণ ধরা হবে, তবে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা করে কমিশন নেওয়া হবে। এতে চাষিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয় এবং বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি ইসমাইল খান বলেন, ‘ঢলন বা কমিশন না দিতে চাইলে আড়তদাররা আম কেনেন না। অনেকেই বাধ্য হয়ে আবার ঢলন দিতে শুরু করেন। কেউ কেউ গোপনে ৫৪ কেজিকে মণ ধরে আম বিক্রি করেছেন।’ কানসাট হাটের ইজারাদার শাহীন মিয়া জানান, বৈঠকে আড়তদাররা কেজিপ্রতি ৩ টাকা কমিশনের পক্ষে ছিলেন, আর চাষিরা রাজি ছিলেন ১ টাকায়। আলোচনার একপর্যায়ে দুই পক্ষই দেড় টাকা কমিশনে সম্মত হন। তবে এখনো ঢলন প্রথা চলছে।
বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সভায় ছিলেন। তিনি বলেন, চাষি ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ‘ঢলন প্রথা’ চলবে না। কেজি দরে আম বেচাকেনা করতে হবে। এজন্য আড়তদাররা কেজিতে দেড় টাকা কমিশন পাবেন। ওইদিন রাতে (১১ জুন) বানেশ্বর বাজারে সভা করে সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেন। রেজল্যুশনে ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়েছে। সকালে মাইকিং করা হয়। এর পরও না মানা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এখন তাদের আর কী করার আছে! চাপাচাপি করলে তারা আম কেনা বন্ধ করে দেবেন। চাষিদের আম পচে যাবে।
বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমদ জানান, ঢলন প্রথার কারণে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। কৃষিপণ্য বিক্রিতে এমন প্রথা চালুর কোনো বাস্তবতা নেই। আড়তদার ও চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করে একটা কমিশন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের চার জেলাতেই এ নিয়ে চলবে। কেউ ব্যত্যয় ঘটালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো চাষিরা অভিযোগ করেননি। তারা অভিযোগ করলে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ৪০ কেজিতে এক মণ হলেও কোথাও ৪৬, কোথাও ৫৫ কেজিতে মণ ধরে চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে থাকেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত আমই ঢলন হিসেবে পরিচিত।