দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। ডিজেলে ভর্তুকি কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তের জেরে এই অস্থিরতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে করে ব্যাপক সংঘর্ষ, লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সন্দেহভাজনদের গণগ্রেফতার করছে দেশটির পুলিশ। বর্তমানে উত্তেজনা রাজধানী লুয়ান্ডা থেকে অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার সরকারের ডিজেলের দাম এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয় মিনিবাস ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলো। এরপর থেকেই শুরু হয় তীব্র বিক্ষোভ। ব্যয়বহুল ভর্তুকি কমানো এবং সরকারি কোষাগার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
এরপর বিক্ষোভ দ্রুতই সহিংসতায় রূপ নেয়। লুটপাট, ভাঙচুর এবং বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার নিরাপত্তা সংকট মূল্যায়ন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করতে একটি জরুরি বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট জোয়াও লরেঙ্কোর মন্ত্রিসভা।
অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে ২২ জন নিহত, ১৯৭ জন আহত এবং এক হাজার ২১৪ জনকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, ৬৬টি দোকান, ২৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একাধিক সুপারমার্কেট ও গুদাম লুট করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালেও জ্বালানি তেলের ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্তে দেশটিতে মারাত্মক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।
অ্যাঙ্গোলা একটি প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ, ধীরে ধীরে জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহার করছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত বছর এই ভর্তুকি ছিল জিডিপির ৪ শতাংশ।
এই সংকট এমন একটি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকি তুলে ধরেছে, যেখানে অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য ভর্তুকিযুক্ত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।
জনগণের ক্ষোভ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির সরকার আর্থিক সংস্কার এবং জনস্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এই সংস্কারগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, কারণ তারা অ্যাঙ্গোলার আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতির একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন।
মার্কিন বিনিয়োগ সংস্থা নিওবার্গার বারম্যানের উদীয়মান বাজার ঋণ ব্যবস্থাপক পিটার নিয়েস্টেন বলেন, ভর্তুকি প্রত্যাহার সরকারের কঠিন কাঠামোগত সংস্কার করার ইচ্ছাকে নির্দেশ করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এ বছর জ্বালানি ভর্তুকি জিডিপির ১.৮ শতাংশ এ নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : আফ্রিকা নিউজ
বিডি প্রতিদিন/কেএ