উজানে ভারতের সিকিম প্রদেশে টানা ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছিল। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীপাড়ের মানুষের কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে। এদিকে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি কমলেও ধুবনি এলাকায় পাউবোর একটি পুরোনো বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রংপুর : পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ ছিল ২০ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। একই সময়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫২ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। তবে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় বাসিন্দাদের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছায়। এতে করে উপজেলার বালাপাড়া, শহীদবাগ ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমায় পৌঁছানোর পর কাউনিয়া পয়েন্টে দুপুরে ১২টায় নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। এতে এসব এলাকার কয়েক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট : পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানি কমলে ধুবনি এলাকায় পাউবোর একটি পুরোনো বাঁধ ভেঙে গেছে, ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে লালমনিরহাটের তীরবর্তী হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ ও পুকুর। ফলে সড়কপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, নৌকা ও ভেলা এখন একমাত্র চলাচলের মাধ্যম। আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের খেত ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী; সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, নদীতীরবর্তী এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে পানিবন্দি মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
নোয়াখালী : টানা বৃষ্টি মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নোয়াখালীতে বন্যার পানি কিছুটা কমলে ও জলাবদ্ধতায় স্কুলশিক্ষার্থীও জনদুর্ভোগ চরমে। গতকাল দুপুরে সরেজমিন গেলে মাইজদী আলফারুক স্কুল সড়কে হাঁটুপরিমাণ পানিতে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। একই চিত্র নোয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড মধুপুর, হরিনারায়ণপুর ও গোপাইসহ বিভিন্ন সড়কে। পানি কমলেও জনদুর্ভোগ কমেনি। এখনো ২ শতাধিক পরিবার জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে আছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, দখল দূষণের বিরুদ্ধে তালিকা করে অভিযান চালানো হবে।
পাঁচ দিন বর্ষণের পূর্বাভাস সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা : দেশের উপকূলীয় এলাকায় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে সংস্থাটি। পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ ও আগামীকাল ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুরে অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারা দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। এ দিন থেকে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা ও কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে।