রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৯ বছর পর স্বজনদের কাছে ফিরলেন পারভীন বেগম (৪৮)। ২০১৬ সালে নিখোঁজ হওয়ার পর তার আর খোঁজ মেলেনি। সময়ের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা ধরে নিয়েছিলেন তিনি মারা গেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই হাসপাতালের অজ্ঞাত ওয়ার্ডে মেয়েকে চিনতে পেরে মায়ের বুকভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ে চারপাশ।
পারভীনের মা জুবেদা বেগম জানান, তিনি ভেবেছিলেন মেয়ে আর নেই। কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ মোবাইল ফোনে পারভীনের ছবি দেখে জানতে পারেন তিনি রামেক হাসপাতালে আছেন। এরপর ভিডিও কলে মেয়ের সঙ্গে কথা বললে পারভীন তাকে চিনতে পারেন। জুবেদা বেগম বলেন, ‘৯ বছর পর মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহ আমার বুকের ধন ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার গাজীপুর গ্রামের মেয়ে পারভীনকে নিতে সোমবার হাসপাতালে যান তার মামি নাসরিন আক্তার ও কয়েকজন আত্মীয়। তারা জানান, এত দিন পারভীনের বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে ফেসবুক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অবশেষে তাকে ফিরে পান।
গত ৩১ জুলাই পাবনার রূপপুর এলাকায় গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে ছিলেন পারভীন। স্থানীয় মাইক্রোবাস চালক তমাল হোসেন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে পাবনা সদর হাসপাতাল হয়ে পাঠানো হয় রামেকে। সেখানে তিনি ৪৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, অজ্ঞাত ওয়ার্ডে আরও কয়েকজন রোগী চিকিৎসাধীন। পারভীনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় তাকে সোমবার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অজ্ঞাত রোগীদের নিয়ে কাজ করে পাবনার ইয়েলো ল্যাম্প নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের সভাপতি শহিদুল্লাহ খান উজ্জ্বল বলেন, ওই নারীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। রক্তাক্ত জখম পুরো শরীরে। তাকে চেনার উপায় ছিল না। রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তির পরে তার শারীরিক উন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের ‘অজ্ঞাত রোগীদের জন্য অস্থায়ী ওয়ার্ড’-এ দায়িত্বে থাকা আলেয়া খাতুন বলেন, তার পরিচয় ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত রোগীর ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তকরণে দরখাস্তের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছিল পুলিশের ফরেনসিক ও সিআইডিতে। তাদের মধ্যেমে জানা যায় তার পরিচয়।’