এবার মাঠের খেলাতেও পড়ল রাজনীতির ঘোরতর ছায়া। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাণ্ডে অবাক হলো অনেকে।
দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর এশিয়া কাপে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ভারত ম্যাচটি সাত উইকেটে জিতেছে। এরপর ভারতীয় ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হননি বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন।
সংঘাতের পর ভারত-পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ ছিল এটি। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ভারত জয়লাভ করার পরই মাঠ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও ক্রিকেটার শিবম দুবে। সাধারণত, ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাত মেলানোর রেওয়াজ আছে। তবে এ ম্যাচে সেটা হয়নি।
পরে পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়রা ভারতের ডাগ-আউটের দিকে গেলেও ভারতীয় খেলোয়াড়রা ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছেন। এমনকি টসের সময়ও দুই দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব এবং সালমান আগার মধ্যে কোনো করমর্দন হয়নি।
পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমরা ম্যাচের শেষে হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের প্রতিপক্ষ এটা করেনি দেখে আমরা হতাশ হয়েছি।'
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সূর্যকুমার যাদব এই জয়কে 'ভারতকে একটি নিখুঁত উপহার' বলে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের পরিবারের পাশে আছি। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা আজকের জয় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যকে উৎসর্গ করতে চাই, যারা অনেক সাহস দেখিয়েছেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কোনো খেলোয়াড় কথা বলেননি। পরে হেসন জানান, ভারতের খেলোয়াড়দের হাত না মেলানোয় পাকিস্তানের অধিনায়ক আগা কথা না বলার সিদ্ধান্ত নেন। হেসন বলেন, আমরা ওখানে হাত মেলানোর জন্য গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আগেই ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছিল। এটা ম্যাচের জন্য হতাশাজনক এক সমাপ্তি।
এই বছরের এপ্রিল মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে একটি জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সামরিক সংঘাত হয়েছিল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে। এরপর ভারত পাকিস্তানের ভেতরে এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তানও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে দুই প্রতিবেশী দেশের সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘাত, যেখানে বহু মানুষ মারা গিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে সূর্যকুমার যাদব বলেন, 'সরকার এবং বিসিসিআই (বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া), আমরা সবাই একমত ছিলাম। আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং শুধুমাত্র খেলাটি খেলতে এসেছিলাম। আমরা যথাযথ জবাব দিয়েছি।'
এবারের এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তান আবার মুখোমুখি হতে পারে। যদি উভয় দলই টুর্নামেন্টের পরের রাউন্ডে পৌঁছায়।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ভারত পাকিস্তানে যেতে রাজি না হওয়ায় দুই দলের ম্যাচ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিল পাকিস্তান।
চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হতে যাওয়া নারী বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জুন মাসে ঘোষণা করা হয়। এই টুর্নামেন্টটি মূলত ভারতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন কোনো দেশই আইসিসি ইভেন্টের জন্য একে অপরের দেশে যাবে না বলে সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল