এক সময় গ্রামের উঁচু গাছে দোল খাওয়া বাবুই পাখির বাসা ছিল গ্রামবাংলার চিরচেনা দৃশ্য। নিপুণ কারুকার্যে তৈরি বাসাগুলো পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য ক্রমেই অতীত হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য সংকট, বৃক্ষ নিধন ও বাসা তৈরির উপকরণ সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তাদের অপরূপ বাসা।
বাবুই পাখি সাধারণত নলখাগড়া ও হোগলার বন পছন্দ করে। কিন্তু বর্তমানে এসব গাছপালা ও বনভূমি কমে যাওয়ায় বাসস্থান হারাচ্ছে এরা। পরিবেশবিদদের মতে, এ পাখিরা মূলত বীজভোজী, যার ফলে তাদের ঠোঁট চোঙাকার এবং গোড়ায় মোটা। বাংলাদেশে বাবুই পাখির তিনটি প্রজাতি দেখা যায়— দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। এদের প্রজনন মৌসুম গ্রীষ্মকালে।
বাবুই পাখির বাসা তৈরি একটি বিস্ময়কর প্রক্রিয়া। উল্টো ঝোলানো কলসির মতো দেখতে এ বাসায় একাধিক কক্ষ থাকে। বাসা তৈরির শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে— একটিকে ডিম রাখার জন্য বন্ধ করে দেয়, অন্যটি হয় যাতায়াতের পথ। ঘাস দিয়ে তৈরি এ বাসার প্রতিটি স্তর পাখিটি ঠোঁট দিয়ে বুনে এবং পেট দিয়ে ঘষে মসৃণ করে। এই কারণে অনেকেই বাবুই পাখিকে ভালোবেসে ‘তাঁতি পাখি’ নামে ডাকেন।
রংপুরের বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের ইনচার্জ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখক কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, ‘বাংলাদেশে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। তবে দেশি বাবুই এখনও তাল, নারিকেল, খেজুর কিংবা রেইনট্রি গাছে বাসা তৈরি করে। তবে খাদ্য সংকট, বাসা তৈরির উপকরণের অভাব ও মানুষের দ্বারা বাসা ভেঙে ফেলার কারণে এসব পাখির সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ