আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন সাবেক ফার্স্ট লেডি সিমিওনি বাগবো। ৭৬ বছর বয়সী এই নারীনেত্রী দেশটিতে পরিচিত ‘লৌহমানবী’ নামে। কখনো স্বামীর সঙ্গে বাংকারে লুকিয়েছেন, কখনো খেটেছেন জেলখানায়, আবার বিচ্ছেদের পর নতুন দল গড়ে তুলেছেন। এতসব নাটকীয় ঘটনার পরও তিনি এবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলাসানে উয়াতারার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ অক্টোবর।
২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন সিমিওনির সাবেক স্বামী লরেন বাগবো। কঠোর ব্যক্তিত্বের কারণে তখন থেকেই সিমিওনি ‘আয়রন লেডি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সমর্থকেরা তাঁকে মমতাময়ী বললেও বিরোধীদের চোখে তিনি ছিলেন ভয়ংকর এক কর্তৃত্বের প্রতীক।
সত্তরের দশকে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সিমিওনি। ইতিহাস ও ভাষাতত্ত্বে স্নাতক এই নারী সক্রিয় ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনে। সেই সূত্রেই লরেনের সঙ্গে পরিচয়। স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হউফুয়ে-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়ে একাধিকবার কারাবন্দী হন দুজনই।
১৯৮২ সালে স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন আইভরিয়ান পপুলার ফ্রন্ট (এফপিআই)। পরে লরেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রক্ষমতার অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন সিমিওনি। তাঁদের আমলে দেশটিতে বিভাজন বাড়তে থাকে এবং শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। বিদ্রোহ দমন, নির্বাচনী জালিয়াতি, বিরোধীদের দমন—সব জায়গায় সিমিওনির প্রভাব ছিল স্পষ্ট।
২০১০ সালের নির্বাচনে লরেন পরাজিত হলেও ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে সংঘাত শুরু হয়, প্রাণ হারান তিন হাজার মানুষ। উয়াতারার সমর্থকেরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ঘিরে ফেললে স্বামীর সঙ্গে বাংকারে আশ্রয় নেন সিমিওনি। সেখান থেকেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সিমিওনির ২০ বছরের কারাদণ্ড হলেও ২০১৩ সালে উয়াতারা তাঁকে সাধারণ ক্ষমা করে মুক্তি দেন।
২০১২ সালে গৃহযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)। যদিও সিমিওনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়, লরেনকে হেগে সাত বছর কাটাতে হয়। দেশে ফিরে এসে ২০২১ সালে লরেন বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
বিচ্ছেদের পর সিমিওনি গড়ে তোলেন নতুন রাজনৈতিক দল মুভমেন্ট অব ক্যাপাবল জেনারেশনস (এমজিসি)। এবার সেই দল থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লরেন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তাই মনে করা হচ্ছে, তাঁর সমর্থকদের বড় অংশ ভোট দেবেন সিমিওনিকে। জয়ী হলে তিনিই হবেন আইভরি কোস্টের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক