মানুষ কখনো নিশ্চিতভাবে জানতে পারে না যে আল্লাহ তাআলা তাকে তার কৃত পাপের জন্য ক্ষমা করেছেন কিংবা এখনো ক্ষমা করেননি। কারণ বিষয়টি গায়েব বা অদৃশ্য জগতের অন্তর্ভুক্ত, যা শুধু আল্লাহই জানেন। এটি মানুষের জ্ঞানের সীমার বাইরে। তবে এমন কিছু লক্ষণ আছে, যা ইঙ্গিত করে যে একজন বান্দার তাওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহর দরবারে গ্রহণ হয়েছে এবং আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করেছেন।
এই লক্ষণগুলো বান্দার আচরণ, হৃদয়ের অবস্থা ও পরবর্তী জীবনযাত্রায় প্রকাশ পায়।
আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তির লক্ষণ
১. গভীর অনুশোচনা ও হৃদয়ের বেদনা : যে বান্দা সত্যিকার অর্থে অনুতপ্ত, তার অন্তর জ্বলতে থাকে পাপের ভারে। সে নিজের ভুলে ব্যথিত হয় এবং আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণা অনুভব করে।
২. নিজের দুর্বলতা ও ত্রুটির স্বীকৃতি : অনুতপ্ত বান্দা সর্বদা নিজেকে অপরাধী মনে করে, মনে করে যে সে আল্লাহর হক আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।
তার অন্তর নম্র হয়, অহংকার মুছে যায় এবং তার মনে জন্ম নেয় আল্লাহর ভয় ও বিনয়।
৩. পাপ থেকে দূরে সরে আসা : যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তাওবা করে, সে শুধু মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে না, বরং সেই পাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকে। সে এমন সব পরিবেশ, মানুষ ও কাজ থেকে দূরে সরে যায়, যা তাকে আবার সেই পাপে টেনে নিতে পারে।
৪. সৎ কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি : অনুতপ্ত বান্দা আল্লাহর আনুগত্যে আরো বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠে।
সে ফরজ ও নফল ইবাদতে মন দেয়, নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে, এবং নেক সঙ্গ ও সৎ সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়।
৫. তাওবার তৌফিককে আল্লাহর এক মহান অনুগ্রহ হিসেবে দেখা : যে ব্যক্তি বুঝতে পারে যে আল্লাহ তাকে তাওবার তৌফিক দিয়েছেন, সে জানে এটি কোনো সাধারণ বিষয় নয়, বরং এটি আল্লাহর এক মহান রহমত ও আশীর্বাদ। তাই সে এই অনুগ্রহের কদর করে এবং নেক কাজের মাধ্যমে তা রক্ষার চেষ্টা করে। সুতরাং যদিও কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেছেন কি না, তবে এসব লক্ষণ ও অন্তরের পরিবর্তনই প্রমাণ করে যে বান্দার তাওবা গ্রহণ হয়েছে এবং আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
ক্ষমা প্রার্থনার শর্তাবলি
যে ব্যক্তি পাপ ও অন্যায় থেকে তাওবা করতে চায় এবং চায় তার তাওবা যেন আল্লাহ তাআলার দরবারে গ্রহণযোগ্য হয়, তাকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও আদব পূরণ করতে হয়।
এ শর্তগুলোই তাওবাকে সত্যিকারের ও কার্যকর করে তোলে।
তাওবা কবুল হওয়ার শর্ত
১. পাপের জন্য আন্তরিক অনুশোচনা : অন্তরে পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের প্রতি গভীর অনুতাপ ও লজ্জা থাকতে হবে। এই অনুশোচনাই তওবার প্রাণ।
২. তাৎক্ষণিকভাবে পাপ পরিত্যাগ করা : যে পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাপে লিপ্ত থেকেও ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রকৃত তাওবা নয়।
৩. ভবিষ্যতে আর পাপে না ফেরার
দৃঢ়সংকল্প : অন্তরে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে যে সে কখনো আর সেই পাপের দিকে ফিরে যাবে না।
৪. যদি পাপ অন্যের অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় তাহলে সেই অধিকার ফেরত দিতে হবে।
তাওবার তিনটি স্তম্ভ
১. সব ধরনের পাপ ও সীমা লঙ্ঘন থেকে সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসা।
২. আবার পাপে না ফেরার দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করা।
৩. শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তাওবা করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন : ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবা করো, যাতে তোমাদের রব তোমাদের পাপ মুছে দেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করান, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হচ্ছে—যেদিন আল্লাহ নবী ও মুমিনদের অপমান করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডান দিকে বিচ্ছুরিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের নূর পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)
সুতরাং তাওবা ও ইস্তিগফার শুধু মুখের দোয়া নয়, এটি একটি গভীর আত্মিক পরিবর্তন, হৃদয়ের পুনর্জন্ম।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন