বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে দেশটির বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর। তবে এজন্য চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে হবে ৬ বিলিয়ন ডলার। কেননা এ মুহূর্তে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে দেশটির সঙ্গে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ৭ লাখ টন গম ও ২৫টি বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এই শুল্ক কমাতে দেশটির দেওয়া আরও কিছু শর্ত রয়েছে যেগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই ইস্যুতে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। গতকাল তারা এই যাত্রায় প্রথম দফা আলোচনা করেছেন। এ সময় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনাকালে ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারা (ইএসটিআর) আমাদের ব্যাপারে খুবই পজিটিভ। শুল্ক কমানোর ব্যাপারে তারা সবুজ সংকেত দিয়েছে। আমাদেরকে বলেছে এক বছরের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি শূন্যে নামানো যায় কি না সেটা বিবেচনায় রেখে আমদানি বাড়াতে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেটা তারা ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। আমরা তাদের দেওয়া প্রস্তাব ও আমাদের পরিকল্পনা এবং প্যাকেজ ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করব। তিনি আরও বলেন, আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আরও দুই দিন আমাদের মিটিং আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআরের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতি অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা : বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশটিতে রপ্তানি হয় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিপরীতে আমদানি হয় প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের। সরকার চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে এই বাণিজ্য ঘাটতি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে। যদিও ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে সেটা ৬ বিলিয়ন ডলার কমানোর কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। সঙ্গে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুল্ক ইস্যুর আলোচনার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
মার্কিন পাল্টা শুল্ক কমাতে চূড়ান্ত দফার আলোচনার আগে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গম, ডাল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।