বাফুফের কর্মকর্তারা যেভাবে কথা বলেন, তাতে মনে হয় সাংগঠনিক ক্ষমতার দিক দিয়ে তারা অনেক এগিয়ে। বাস্তবে অবস্থা কতটা নড়বড়ে তা আবার প্রমাণ দিল। মঙ্গলবার সিডনি টাউন হলে নারী এশিয়ান কাপ ফুটবল চূড়ান্ত পর্বে গ্রুপ নির্ধারণে ড্র অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমারে বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবার স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। আগামী মার্চে এ প্রতিযোগিতা শুরু হবে। অভিষেক আসরে বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হবে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে। কেননা ‘বি’ গ্রুপে চীন, উত্তর কোরিয়া ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে খেলতে হবে। উজবেকের মেয়েরা ততটা শক্তিশালী না হলেও চীন ও উত্তর কোরিয়া দুর্দান্ত দল। আসরে ৯ বার চ্যাম্পিয়ন চীন। উত্তর কোরিয়ার মেয়েরা তিনবার এশিয়ান কাপ জিতেছে। র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে উজবেকিস্তানকেও বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী বলা যায়। টুর্নামেন্টে তাই বাংলাদেশ শূন্য হাতে বিদায় নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
গ্রুপিং বা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এটা কোনো ব্যাপারই না। বড় টুর্নামেন্টে বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলতে হবেই। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন বাংলাদেশের নারী দলের হেড কোচ পিটার বাটলার। সত্যি বলতে আফঈদারা যে এশিয়ান কাপ চূড়ান্ত পর্বে খেলবেন এটাই দেশের ফুটবলে বড় প্রাপ্তি। নারী ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে দেশবাসী সন্তুষ্ট। কিন্তু বাফুফে মেয়েদের কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে এ টুর্নামেন্ট ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিযোগিতা তো আছেই, একটা টুর্নামেন্টে ড্র অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কাছে তো ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা বাছাইপর্ব টপকে প্রথমবার চূড়ান্ত পর্ব খেলছে। অথচ বাফুফে যা করেছে তাতে স্পষ্ট হয়েছে নারী ফুটবলারদের সাফল্য ছিল তাদের কাছে গুরুত্বহীন।
এতে অনেকে হয়তো অবাক হতে পারেন এমন কথায়। কেননা যে মেয়েরা একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছেন তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে কেন? আসলে ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড তো বলে দিচ্ছে মেয়েদের তারা কোন দৃষ্টি থেকে দেখছে? সিডনির ড্র অনুষ্ঠানে মূল পর্বে সুযোগ পাওয়া প্রতিটি দেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোনো কোনো দেশের বাছাইপর্বে খেলা অধিনায়করাও ফটোসেশনে অংশ নেন। কিন্তু বাংলাদেশের কাউকে দেখা যায়নি। আমন্ত্রিত হওয়ার পরও বাফুফে কেন প্রতিনিধি পাঠাল না। কর্মকর্তা না যাক, অধিনায়ক বা কোচকে তো পাঠাতে পারত। কেন এই গুরুত্বহীনতা? বিদেশ শুনলেই তো কর্মকর্তারা লাফালাফি শুরু করেন। এত গুরুত্বপূর্ণ ড্র অনুষ্ঠানে কেন নিষ্ক্রিয়তা?
জানা গেছে, ঘটনা নাকি এখানে অন্যটা। বাফুফের এক নারী কর্মকর্তা আছেন। হিসাব অনুযায়ী এ অনুষ্ঠানে তারই যাওয়ার কথা। কিন্তু তার বিদেশ যাওয়ার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এজন্য এ অবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি ছাড়া আর কি কেউ ছিলেন না। সেই নারী কর্মকর্তার প্রভাব নাকি এতই বেশি, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে পাঠাতে ফেডারেশন সাহস পায়নি। নানা বিতর্কিত ভূমিকা রাখার পরও তিনিই নাকি দাপটে পথ ধরে রেখেছেন। একজনের জন্য বাফুফে যে বারবার বিতর্কিত হচ্ছে তা কি কেউ বুঝেও বোঝে না। নারীদের যে অবহেলা করা হলো, এর দায়ভার তো সভাপতির ওপর পড়বে। একজন বিতর্কিত কর্মকর্তার কারণে সভাপতি নিজেই যে বিতর্কিত হচ্ছেন তা কি তিনি বোঝেন না?