শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ওরা অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা

এক বছরে প্রায় ৬ হাজার করোনাসহ মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান

রফিকুল ইসলাম রনি

ওরা অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা

করোনাসহ মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিতে ‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ স্লোগানে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ চালু করেন ছাত্রলীগের তিন নেতা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমীন জাহান বুধবার রাতে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জরুরি একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। কোনো সহৃদয় ব্যক্তির সহযোগিতা চাচ্ছি।’ রাত ২টায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ম্যানেজ করে বাসায় পৌঁছে দেন ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র উদ্যোক্তারা। একইভাবে গতকাল বিকালে পূর্ব রামপুরা থেকে একজন ফোন করেন অক্সিজেনের জন্য। তার বাসাতেও পৌঁছে দেওয়া হয় অক্সিজেন সিলিন্ডার। গত বছরের জুন-জুলাই থেকে এভাবেই রাতদিন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নিরলসভাবে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছেন ছাত্রলীগের তিন নেতা। ইতিমধ্যে তারা ‘অক্সিজেন ফেরিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এই তিন ছাত্রলীগ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ। জানা গেছে, গত বছর মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়। জুন, জুলাইয়ে প্রকট আকার ধারণ করলে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যায়। দ্বিগুণ দামেও পাওয়া যাচ্ছিল না অক্সিজেন সেবা। ঠিক সে সময়ই করোনাসহ মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিতে ‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ স্লোগানে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ চালু করেন তারা। সেই থেকে শুরু করে প্রতিটি দিন-রাত সমানতালে ফোন পেলেই ছুটে যাচ্ছেন মানুষের সেবায়, তারা অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা। গত বছর জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন তারা। শুধু তারাই নয়, সারা দেশে এখন স্বেচ্ছাসেবকও তৈরি হয়েছে। ১৪০ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। এই অক্সিজেন সেবাটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত। ফোন করা মাত্রই অক্সিজেন সেবকরা পৌঁছে যাচ্ছেন রোগীর কাছে। এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুরুর দিকে আমাদের জন্য কাজটি সহজ ছিল না। আমরা যখন শুরু করি তখনকার পরিস্থিতি বর্তমানের মতো ছিল না। মানুষের মাঝে বিরাজ করছিল করোনার মারাত্মক ভীতি। কোন বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গেলে আশপাশের মানুষের হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। এমনও হয়েছে অক্সিজেন নিয়ে গেলে ছেলে সামনে আসেনি। তার বাবাকে আমরাই অক্সিজেন সেট করে দিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারের দোয়া ও ভালোবাসা আমাদের কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে। আসলে মানুষের জন্য কাজ করার সময় ও সুযোগ সবসময় আসে না। যতদিন এই পরিস্থিতি চলবে ততদিন আমরা এই কার্যক্রম চালু রাখব। এই কাজে এগিয়ে আসে বিভিন্ন প্রবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্তরে অবদান রাখা মানুষের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে সাদ বিন কাদের বলেন, দেশের জন্য যে কোনো উদ্যোগ নিলে এখন ভালো মানুষ পাশে এসে দাঁড়ায়, এটি তারই একটি উদাহরণ। আমরা চাই সেবাটি প্রত্যেক জেলা শহরে নিয়ে যেতে এবং এই মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের সেবা করতে চাই।

সর্বশেষ খবর