দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৃণমূল রাজনীতির দৃশ্যপটে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শহর থেকে গ্রামে পালানোর পথ খুঁজতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। উল্টোদিকে দীর্ঘ সময় ধরে বাড়িঘর ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ওইদিন রাত থেকে নিজের এলাকায় আসতে শুরু করেন। যারা প্রবাসে ছিলেন তারাও গত কয়েকদিনে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিকাল থেকে চট্টগ্রামের জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা দলে দলে এলাকা ছেড়েছেন। অনেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলায় আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ দেশও ছেড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) এভাবে পালিয়ে যাবেন স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি যদি আটক হতেন, মারাও যেতেন আজ এই দুর্দশা হতো না। এদিকে নিজ নিজ এলাকার নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার খবরে পালিয়েছেন কর্মী-সমর্থকরাও। ফলে পুরো এলাকা কার্যত আওয়ামী লীগশূন্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক রোষের শিকার বিএনপি-জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা দলে দলে নিজ এলাকায় ফিরেছেন। দীর্ঘদিন নিজের এলাকায় যেতে পারেননি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। শনিবার তিনি এলাকায় গিয়ে এক পথসভায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘সাড়ে ১৬ বছর পর রাঙ্গুনিয়া একনায়কতন্ত্রের জিম্মি থেকে মুক্ত হয়েছে। আমার বাবা সালাউদ্দিন কাদেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। জানাজায়ও যেতে পারিনি। আজ রাঙ্গুনিয়া মুক্ত হয়েছে। এখানে কোনো লুটপাট, চাঁদাবাজি চলবে না।’ ৩২টি মামলা ও তিন বছরের সাজা নিয়ে দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। গত শনিবার তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামলে রাউজান, রাঙ্গুনিয়ার হাজারো বিএনপি নেতা-কর্মী তাকে স্বাগত জানিয়ে মোটর শোভাযাত্রা দিয়ে রাউজানে নিয়ে যান। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি শান্তির রাজনীতি। কেউ জুলুম, অবিচার, অত্যাচার, লুটপাট করবেন না। আওয়ামী লীগ হত্যা, নিপীড়ন করে এ দেশকে শেষ করেছে। দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে।’ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপকর্ম, গুম, খুনের আমলনামা পূর্ণ করে ফেলেছে। তারা এত বেশি অপকর্ম করেছে তাদের নেত্রী পালানোর সঙ্গে সঙ্গে তারাও পালিয়েছে।
আমাদের নেতা-কর্মীরা গত দেড় যুগ প্রতিহিংসার শিকার। এখন বাড়ি ফিরছেন মনের আনন্দে। এ আনন্দ যাতে আর বিষাদে পরিণত না হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চাই।’ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের ক্ষোভ কতটা বাড়লে প্রধানমন্ত্রীকে পালাতে হয় সেটা এখন পরিষ্কার। আমাদের নেতা-কর্মীরা বাড়ি ফিরছেন, স্বাধীনতার স্বাদ নিচ্ছেন।