কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির রাজধানী সিউলে গত ২০ জানুয়ারি এক মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি চীনের উহান থেকে আসেন। তাকে সাথে সাথে কোরিয়ান কর্তৃপক্ষ সেলফ কোয়ারেন্টাইনের আওতায় নিয়ে আসে। সর্বত্র কড়া নজরদারি, কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো মাসজুড়ে কোরিয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলো মাত্র ৩০ জন। ঘটনার শুরু অন্য দিকে, ৬ ফেব্রুয়ারি একজন নারী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে তিনি দুইবার বাইরে গিয়েছিলেন। একবার স্থানীয় একটা চার্চে, প্রার্থনা করার জন্য, আরেকবার বুফে বন্ধুদের সাথে লাঞ্চ করার জন্যে। প্রায় ১৫ দিনের মাঝে, তিনি কেবল চার ঘণ্টার মতো বাইরে কাটিয়েছেন। চার্চ আর বুফেতে।
জানা যায়, হাসপাতালে অবস্থানকালীন সেই নারীর একবার জ্বর আসে। কেউ কেউ উনাকে করোনা টেস্ট করাতে পরামর্শ দেন। তিনি পাত্তা দিলেন না। শরীরে জ্বর জ্বর ভাব নিয়েই চার্চ আর বুফে চার ঘণ্টা কাটিয়েছেন আলাদা আলাদা দিনে। এরপর জ্বর যখন বেড়ে যায়, তিনি করোনা টেস্ট করান, এবং তাতে ধরা পড়ে যে তিনি করোনায় পজিটিভ। করোনাভাইরাসে তিনি হন দেশটিতে ৩১ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি। এই ৩১ নম্বর থেকেই বিপদে পড়ে সমগ্র দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সে ৩১ থেকে হু হু করে এখন কোরিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা আজ রবিবার পর্যন্ত ৮,৮৯৭।
তদন্তে উঠে এসেছে সেই নারী দেগুর শিওমপঞ্জি সম্প্রদায়ের চার্চে গিয়েছিল দুই ঘণ্টার জন্য, চার্চের তিনশ জনের বেশি মানুষ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়। ওই তিনশত থেকে মানুষ পরে আরো অনেক মানুষকে, তারা আরো বেশি মানুষকে, এভাবে একপ্রকার করোনায় ছেয়ে গেলো গোটা দক্ষিণ কোরিয়া। একজন ব্যক্তি পুরো একটা দেশে ভাইরাসটা ছড়িয়ে দিলো। এটা করার জন্যে তার কেবল দরকার হয়েছে ৪টা ঘণ্টা।
দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাশাপাশি দুটো শহর- দেগু এবং ছংদোকে ভাইরাস ছড়ানোর সূত্র হিসাবে দেখা হচ্ছে। সন্দেহের তীর গিয়ে পড়েছে ওই অঞ্চলের শিনচিওঞ্জি নামে ক্ষুদ্র একটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দিকে। দেগু এবং ছংদোতেতে এ ধর্মীয় গোষ্ঠীর কয়েকশ’ সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর ছড়ায়।
কোরিয়ার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছ, করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশই শিনচিওঞ্জি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুসারী।
এখনো পর্যন্ত ওই গোষ্ঠীর নয় হাজারেরও বেশি সদস্যকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঘরের মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
উল্লেখ্য, ছংদোতে শিনচিওঞ্জি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার ভাইয়ের মৃত্যুর শেষকৃত্যে ১ হাজার মানুষ অংশ নেন। তারপরই ওই সম্প্রদায়ের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার নানা উপসর্গের কথা জানায়।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা