চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তে ভাঙল গত তিনমাসের রেকর্ড। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ১৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়। কিন্তু গত মঙ্গলবার একদিনেই আক্রান্ত হয় ১৮৩ জন। গতকাল শনাক্ত হয় ১৫৯ জন।
ফলে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। সঙ্গে কমেছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা। ইচ্ছামত ঘোরাফেরা করছেন সকলেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গত ১৫ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিকা গ্রহণ করার পর মানুষের মধ্যে মাস্ক পড়ার প্রবণতা কমছে। তাই সংক্রমণ বাড়ছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা রোগী শনাক্ত হয় মোট এক হাজার ৮৫৯ জন। অথচ চলতি মার্চ মাসের ১৬ দিনেই শনাক্ত হয় এক হাজার ৮৩০ জন। গত মাসে করোনায় মারা যান ৯ জন। এ মাসের ১৬ দিনেই মারা যান ১০ জন। গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হন ৩৭ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে মহানগরে ২৯ হাজার ২৫৮ জন এবং ১৫ উপজেলায় ৭ হাজার ৭৭০ জন। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮৩ জন। এর মধ্যে মহানগরে ২৮১ জন এবং উপজেলায় ১০২ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে এখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। মানুষের মধ্যে কমে গেছে করোনাভীতি। চলছে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। রাস্তায় চলাফেরা করছেন মাস্ক ছাড়াই, মানছে না সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ মানুষই গুরুত্ব দিচ্ছে না করোনাকে। ফলে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অজয় দেব বলেন, অনেকে মনে করেন, করোনার দুই ডোজ টিকা নেবার পর ঝুঁকি মুক্ত হয়ে যাবে। এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ প্রথম ডোজ দেওয়ার সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ পরে টিকা গ্রহণকারীর ৭৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় এন্টিবডি (ইম্যুনিটি) তৈরি হয়। বাকিদের মধ্যে ইম্যুনিটি তৈরি হয়না। এই না হওয়াদের কারণে টিকা গ্রহণকারীর মধ্যেও সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। টিকা দেওয়ার পরও অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। সঙ্গে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, গত ১৫ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসনের ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে মাঠে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছেন। অভিযানে মানুষকে সচেতন করা, প্রয়োজনে জরিমানা এবং সঙ্গে মাস্কও বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান না করাসহ সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর