দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক মোংলা-খুলনা। মোংলা বন্দর, ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চল ও সুন্দরবনের পর্যটকের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম জাতীয় এ মহাসড়ক। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কটিতে হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য খানাখন্দ। চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ মহাসড়কের ৪১ কিলোমিটার পড়েছে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের অধীনে। এর মধ্যে কাটাখালী মোড় থেকে তেঁতুলিয়া সেতু ও দ্বিগরাজ রেলক্রসিং থেকে মোংলা ফেরিঘাটে অবস্থা বেশি খারাপ। কোনো কোনো স্থানে গর্তের গভীরতা এক থেকে দেড় ফুট বা তারও বেশি। খানাখন্দের পাশাপাশি মহাসড়কের অনেক স্থান উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। প্রায়ই খানাখন্দে পড়ে বাস-ট্রাকসহ আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই লড়ি ও কাভার্ড ভ্যান আটকে পড়ছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫ কিলোমিটারে জমে থাকা কাদাপানির কারণে হেঁটেও চলাচল করা যাচ্ছে না। সড়কের কারণে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
বাগেরহাট সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, এই মহাসড়কের অধিকাংশ জায়গায় দুই পাশে, কোনো কোনো জায়গায় এক পাশে মাছের ঘেরে পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে ঘেরের পানি আরও বাড়ে। তখন পানির চাপে মাটি-বালু সরে সড়ক দুর্বল হয়। দেবে যায় কোথাও কোথাও। তাছাড়া গাড়ির চাপও অনেক বেশি। ইট খোয়া দিয়ে আপাতত গর্তগুলো ভরাট করে গাড়ি চলার উপযোগী রাখছি। বৃষ্টি কমলে পাথর-বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য এ কে এম আনিসুর রহমান ইসলাম বলেন, মোংলা ফেরিঘাট থেকে দিগরাজ পর্যন্ত সড়ক বন্দরের আওতাধীন। অতিবৃষ্টির কারণে এ অংশের অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক সংস্কারে টেন্ডারের ওয়ার্ক অডার হয়েছে। অতি দ্রুত কাজ শুরু হবে। বাগেরহাট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, মোংলা-খুলনা এন-৭ জাতীয় মহাসড়কের ৪১ কিলোমিটার পড়েছে বাগেরহাটে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নতকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মোংলা ফেরিঘাট থেকে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মহাসড়কে চলাচল চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, মোংলা-খুলনা মহাসড়ক ‘মারণফাঁদে’ পরিণত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ট্রাকচালক কবির হোসেন ও কাভার্ড ভ্যানচালক খলিলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন মোংলা বন্দরের পণ্যবাহী শত শত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ কয়েক হাজার যান চলাচল করে এ সড়কে। বছরের পর বছর সংস্কার না করায় প্রায়ই গাড়ি গর্তে আটকে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।