১৫ জুলাই, ২০২০ ২০:৩৪

অজগর মেরে ফেসবুকে পোষ্ট, ক্ষুব্ধ পরিবেশবাদীরা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

অজগর মেরে ফেসবুকে পোষ্ট, ক্ষুব্ধ পরিবেশবাদীরা

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বিশাল আকৃতির এক পাহাড়ি অজগর সাপ মেরে ফেলে স্থানীয়রা। এরপর সাপ মেরে উল্লাস প্রকাশ করে সেই ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোষ্ট করেন তারা। এ ঘটনায় অনেকের কাছে অমানবিক মনে হয়েছে বিষয়টি। ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরিবেশবাদীরা।

গতকাল মঙ্গলবার (১৪) বিকালে দুর্গাপুরে পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরীর পানিতে একটি অজগর সাপ ভেসে আসে। পরে সেটি কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্পের অদূরে রানীখং মিশনের সামনে ফুটবল খেলার মাঠের পাশের ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয়পুর রানীখং মিশনের সামনে ফুটবল খেলার মাঠে ঝোপের আড়ালে বড় কিছু নড়াচড়া দেখতে পেয়ে এক যুবক এগিয়ে যায়। পরে বিশালাকৃতির সাপ দেখতে পেয়ে দৌড়ে সহপাঠীদের জানালে তারাও ছুটে এসে ঝোপের ভিতর অজগরটিকে দেখতে পায়। সাপটি বাঁচতে ঝোপের আড়ালে গাছের গোড়ালিতে বসে ছিলো।

এসময় আশপাশের স্থানীয় প্রায় ২০/২৫ জন নিয়ে বাঁশ কাঠ দিয়ে মাথা ও শরীরে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলে লুকিয়ে থাকা অজগরটিকে।
সাপটির মৃত্যু নিশ্চিত হলে স্থানীয় যুবকরা উল্লাস করে নানান অঙ্গভঙ্গিতে মৃত অজগর নিয়ে বাঁশে ঝুলিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে এবং ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্ট করে।

এমন ছবিগুলো ফেসবুকে দেখে পরিবেশবাদী ও পশুপ্রেমিদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা বলেন, সাপটি লুকিয়ে থেকেও অমানবিক মানুষদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

সোমেশ্বরী ফ্রেন্ডস ক্লাবের সভাপতি পরিবেশ রক্ষা সংগঠক রিফাত আহমেদ রাসেল জানায়, অত্যন্ত অমানবিক একটি কাজ করেছে। যারা এই সাপটিকে মেরেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি গত কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভেসে এসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলো প্রায় ১২ ফুট লম্বা অজগরটি। এক সময় দুর্গাপুরের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অজগরসহ বিভিন্ন প্রকার বন্যপ্রাণীর দেখা মিলত। কিন্তু পাহাড় কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বন উজাড় করায় আবাসস্থল হারাচ্ছে এসকল বন্যপ্রাণীরা।

তিনি আরও জানান, তার ওপর প্রতিনিয়তই নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের। এই কারণে দুর্গাপুর পাহাড়ি এলাকা হওয়া সত্বেও  বিভিন্ন প্রকারের বন্য প্রাণী আজ পুরোপুরি বিলুপ্ত। আর যেগুলো আছে তা রক্ষা না করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রাণীকুল অনেকটাই অজানা হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমা জানায়, আমি বিষয়টি শোনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে অজগরটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। কিন্তু ততক্ষণে স্থানীয় লোকজন সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল।

এদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম জানান, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় সাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সাপটিকে হত্যা করা স্থানীয়দের ঠিক হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি শোনার পর আমি তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি এবং স্থানীয়দের সতেচন করেছি যাতে পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী হত্যা থেকে তারা বিরত থাকেন। এরকম কোনো বন্যপ্রাণী উদ্ধার হলে তাৎক্ষনিক আমাদেরকে জানালে আমরা তা উদ্ধার করে যথাস্থানে পুনরায় অবমুক্ত করার ব্যবস্থা করবো।

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর