ফেনীতে হতদরিদ্র প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি ইউপি চেয়ারম্যান ও কতিপয় কর্মকর্তারা জড়িত বলে জানা গেছে। সরকার গ্রামের গরিব-কর্মহীনদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করলেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অনেক সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম।
ইজিপিপি’র আওতায় জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের খাজুরিয়া পালবাড়ি থেকে দেবিপুর সড়ক, ফেনাপুস্করনী থেকে তিল্লার দিঘী, দক্ষিণ তালবাড়িয়া এবং তারাকুচার নারায়ন দিঘী থেকে ফেনাপুস্করনীর সংযোগ সড়কগুলোর কাজ কাগজে-কলমে ২০২০/২১ অর্থবছরে মেরামত দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ দেখেনি এলাকাবাসী।
প্রতিটি প্রকল্পে তথ্য সংশ্লিষ্ট সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও সেটি কখনো লক্ষ করা যায়নি। শুধুমাত্র বিল উত্তোলনের সময় ফেস্টুন লাগিয়ে ছবি তোলার অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রকল্পটিতে বছরে দু’বার মোট ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে তালিকাভুক্ত নারী-পুরুষ শ্রমিকরা ৮ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ ভিডিও ক্যামেরার সামনে এসে জানান, তাদের এলাকার রাস্তায় বিগত চার বছরেও এক বালতি মাটি দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা নিজেদের টাকা দিয়ে কোনো রকম রাস্তা ঠিক করে চলাচল করে। রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রকল্পের অধীনে টেন্ডার হয়েছে তারা জানেন, কিন্তু কাজ হতে কখনো দেখেননি। চেয়ারম্যান-মেম্বারকে অনেকবার বলার পরও রাস্তার কোনো কাজ হয় না।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তাদের ইউপি অফিসের সহকারী নিতাই চন্দ্র কয়েকমাস পর পর ফোন করে নিয়ে যায়। তারপর তাদের কাছ থেকে খালি চেকে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। স্বাক্ষরের পর তাদের ৫০০ টাকা করে ধরে দেয়। কী জন্য তাদের থেকে চেকে স্বাক্ষর নেয় তাও তারা জানেন না। তবে কিছুদিন আগে শুনেছেন, তাদের নামে প্রকল্প থেকে ৮ হাজার টাকা করে আসে। তবে কোন প্রকল্প তারা জানেন না। সে টাকা নিতাইয়ের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের লোকেরা আত্মসাৎ করে ফেলে।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি অফিসের সহকারী নিতাই চন্দ্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব অভিযোগ মিথ্যা। যার যার চেক দিয়ে তারা টাকা উঠায়।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম জানান, এই ব্যাপারে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে প্রতি বছর এসকল প্রকল্পের মাধ্যমে বরাদ্দ আসে। বরাদ্দের পরিমাণ কত তা জানতে হলে আবেদন করতে হবে বলে জানান।
সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তালিকা দিতে অসুবিধা কোথায় এই কথা বলার পরও তিন বলেন, আগে আবেদন করুন, তারপর চিন্তা করে দেখা যাবে তালিকা দেওয়া যায় কিনা।
আমজাদ হাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির হোসেন মীরুর কার্যালয়ে একাধিকবার যাওয়ার পরও তার কক্ষ বন্ধ পাওয়া যায়। বারবার ফোন করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। চেয়ারম্যানের সচিব জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার জানান, এই সকল সড়কগুলোর কাজ হয়েছে। কত টাকার কাজ তার তথ্য পেতে হলে আবেদন করতে হবে।
এ বিষয়ে ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান জানান, বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে পাঁচদিন কর্মহীন প্রান্তিক শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রকল্পটির উদ্যোগ। কিন্তু পুরো জেলায় অতি দরিদ্রদের তালিকায় বেশিরভাগ নাম রয়েছে সচ্ছলদের। অতি শিগগিরই সড়কগুলো মেরামত করা হবে এবং হত দরিদ্রদের টাকা তাদের ফেরৎ দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই