বিভিন্ন ফলের সমাহারে ঠাসা মধু মাস চলছে বাংলায়। বিশেষ করে দিনাজপুর অঞ্চলে দেশের সেরা লোভনীয় লিচু ও আমের সমাহার। আর এই দু’টিসহ ফলের মওসুমে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কদর বাড়ে বাঁশের ঝুড়ি বা টুকরির। তাই ফল পরিবহণে ব্যবহৃত বাঁশের ঝুড়ি বা টুকরি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে দিনাজপুরের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাহালী জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা।
যদিও এই শিল্প এখন অনেকটা হুমকির মুখে, কোথাও কোথাও হারাতে বসেছে বিকল্প প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ক্যারেটের দাপটে। তবে সহজ ব্যবহারযোগ্য বাঁশের ঝুড়ি বা টুকরির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই দেশ সেরা লিচুর বাজারজাতকরণে এই ঝুড়ি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঝুড়ি বুননে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুর পৌর এলাকার কসবা আদিবাসী পাড়া, ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউপির জয়নগর গ্রামের মাহালী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা। তাদেরও এখন চলছে জীবন ও জীবিকার মৌসুম।
মাহালী সম্প্রদায়ের অনেকেই এখনও বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছেন। বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ঝুড়ি, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খলইসহ নানান জিনিস তৈরি করেন তারা।
জয়নগর মাহালীপাড়ায় স্টেফান সরেন ও তার স্ত্রী মিনা মার্ডি, সুধীর মার্ডি ও তার স্ত্রী সোনা মনি হেমরম এবং সুজন মার্ডি, হেমচন্দ্র মার্ডি ও রমেশ মার্ডিসহ এবং কসবা আদিবাসী পাড়ার শ্যামল মারান্ডী, নির্মল মারান্ডী, দাউদ হাসদারা বংশ পরম্পরায় ব্রিটিশ আমল থেকেই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেলার অন্য স্থানের মাহালী সম্প্রদায়ের লোকজনও এসব জিনিস তৈরি করেন।
স্টেফান সরেন ও সোনা মনি হেমরম জানান, এখন বাঁশের দাম বেশি। বাঁশ কিনে এনে দিনে স্বামী-স্ত্রী মিলে ৪-৫টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন।
সুধীর মার্ডি বলেন, ‘একসময় প্রতিযোগিতা করতাম ঝুড়ি তৈরির। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই, কারণ আমের জন্য প্লাস্টিকের ক্যারেট ব্যবহার করায় শুধুই লিচুর ঝুড়ি তৈরি করছি।’
তারা স্বামী-স্ত্রী দিনে ৮-১০টি ঝুড়ি তৈরি করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘ঝুড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে। বাঁশের দাম বাড়লেও ক্রেতারা আগের দামেই ঝুড়ি কিনতে চান এবং কেনেনও।’
সুধীর মার্ডি বলেন, এখন একটি বাঁশ কিনতে হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। একটি বাঁশ থেকে সর্বোচ্চ ৬-৭টি ঝুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি লিচুর ঝুড়ি বিক্রি হয় ৮০-৯০ টাকায়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল