বগুড়ায় চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়াসহ অন্যান্য সার পেয়ে আমন আবাদে মাঠে নেমেছে চাষিরা। জেলায় সারের সংকট না থাকায় চাষিরা আগের থেকে দিগুণ তেজে আমন চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। আমনের ক্ষেতে সার পরায় মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন, সারের সংকট না থাকায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারো আমনের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত সার থাকবার পরেও আরো দুই হাজার মেট্রিক টন সার পেয়েছে বগুড়া জেলা।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া জেলায় ধান, সবজি ও আলুর আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। বগুড়ায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। বর্তমানে মাঠে শাক-সবজি আবাদের পাশাপাশি রোপা আমন ধান রোপণ চলমান রয়েছে। জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ অর্জিত হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শতভাগ জমিতে রোপণ সম্পন্ন হবে বলে কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মাঠে মাঠে চাষিরা আমন চাষের পর এখন নিড়ানি ও আগাছা পরিষ্কার করছে। রোপণকৃত জমিতে প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োগ চলছে। জেলায় সারের সংকট না থাকায় চাষিরা ডিলারদের কাছ থেকে সার নিয়ে জমিতে ছিটানো শুরু করেছে।
বগুড়া সদরের আমন চাষি মো. মামুন জানান, গত বছরও ভালো ফলন পেয়েছি, এবারো ভালো ফলনের আশায় ক্ষেত পরিচর্যা চলছে। সময়মতো সার পাওয়া গেছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের আমন চাষি কামাল হোসেন জানান, সার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, ন্যায্যমূল্যে সার পাওয়া যাচ্ছে। জমিতে সার দেওয়াসহ এখন নিড়ানির কাজ চলছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউপির পারতিত পরল গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, সার নিয়ে যে কথা ছড়ানো হয়েছিল, সেটি ঠিক নয়। জমি চাষের পর ডিলারের কাছে থেকে ইউরিয়া সার পাওয়া গেছে। ১১০০ টাকা বস্তা সার নিয়ে জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে। সার নেওয়ার সময় অন্যান্য আমন চাষিরাও একই দামে সার ক্রয় করেছে।
সারিয়াকান্দি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলায় ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের সার বিতরণ চলছে। গত চালানে আমরা ৮৪৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ডিলারদের মাঝে বিতরণ করেছি। রবিবার সকালে আরও ১৮৬ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের অতিরিক্ত চালান এসেছে, যা বিক্রয় অব্যাহত আছে। প্রতিটি ডিলারদের সাথে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার বিক্রয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং অব্যাহত রেখেছেন। এতে করে প্রকৃত কৃষকরাই সার পাচ্ছেন। উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, সারের কোনো সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে নিয়মিতভাবে সার মাসের শুরুতেই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। আগস্ট মাসের সার জেলার বিপরীতে ইউরিয়া ৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ২ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ ছিল। ডিলাররা সার উত্তোলনের পরে বর্তমানে জেলায় ইউরিয়া সার ১ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৮৯০ মেট্রিক টন, এমওপি ৫৭০ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ১ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন সারের মজুদ রয়েছে।
গত বছর আমন মৌসুমে সমপরিমাণ জমিতে একই রকম সার বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরও একই পরিমাণ সার বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়াও এ বছর জেলায় অতিরিক্ত ২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এদিকে সেপ্টেম্বর মাসে ইউরিয়া ৬ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ২ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন সারের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। ফলে ফসলের জন্য সারের কোনো সংকট থাকছে না বগুড়ায়।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, সারের কালোবাজারি ও সরকারি নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতকল্পে জেলায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় সারের মজুদ সন্তোষজনক। কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকের পাশে রয়েছে। কোনো সার ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বগুড়ায় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সার মজুদ করা আছে। প্রয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কৃষকদের কাছে সার পৌঁছানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই