২৯ নভেম্বর, ২০২২ ২১:১৬

একই সাথে মা ও ছেলের এসএসসি পাস

পাবনা প্রতিনিধি

একই সাথে মা ও ছেলের এসএসসি পাস

একই সাথে মা ও ছেলের এসএসসি পাস

পাবনায় মা ও ছেলে এক সাথে এসএসসি পাস করেছে। সোমবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মা মুঞ্জুয়ারা খাতুন পেয়েছে জিপিএ- ৪.৯৩ ও ছেলে মেহেদী হাসান পেয়েছে ৪.৮৯।

চলতি বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তাড়াশ শামীমা জাফর মৎস্য ইনস্টিটিউট থেকে মুঞ্জুয়ারা খাতুন ও খান মরিচ বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভকেশনাল শাখা থেকে সুলতানপুর গ্রামের মো. আব্দুর রহিমের ছেলে মো. মেহেদী হাসান পরীক্ষায় অংশ নেয়। আব্দুর রহিম ও মুঞ্জুয়ারা খাতুন দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মেয়েটি ওই গ্রামের সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

মুঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, ২০ বছর আগে অভাব-অনটনের সংসারে বাবা পাশের উপজেলা ভাঙ্গুড়ার সুলতানপুর গ্রামে আব্দুর রহিমের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় ছেলের জন্ম হয়। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে আবারও পড়াশোনার প্রতি টান অনুভব করেন মুঞ্জুয়ারা। ছেলের সাথে পরীক্ষা দিয়ে এমন ফলাফল অর্জনের বিষয়টি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।

তিনি জানান, আমার ফলাফলের নেপথ্যে যা কাজ করেছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছি, এমন সময় নিজেরও মনে হয়েছে একটু পড়াশোনা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু দুই সন্তানের পর নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য আমার ছিলো না। তবুও আমি মনোবল হারাইনি।

বিষয়টি নিয়ে আমার স্বামীর সাথে আলাপ করলে তিনি আমায় সাহস দেন। স্বামীর অনুপ্রেরণা আর আর্থিক সহযোগিতায় আমার এই অর্জন। তবে এসএসসি পাসের পর উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। অভাব-অনটনে স্বামীর ভ্যান চালানোর টাকায় ছেলে-মেয়ে আর আমার পড়াশোনা কিভাবে চলবে, সেটা নিয়েও মুঞ্জুয়ারা খাতুন চিন্তিত। তবে তিনি ন্যূনতম ডিগ্রি পাস করতে চান।

ছেলে মেহেদী হাসানও মায়ের সাথে এসএসসি পাস করায় খুশি। তিনি বলেন, লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। মায়ের সাথে এসএসসি পাস করে আমি গর্ববোধ করছি। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন একজন মানুষের মতো মানুষ হতে পারি।

খান মরিচ বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন সাগর বলেন, মেহেদী আমার প্রতিষ্ঠানের ভোকেশনাল শাখার নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। তার পাস করার পর আজ শুনলাম ছেলের সাথে তার মাও এসএসসি পাস করেছে, বিষয়টি সত্যিই আনন্দের।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, এ ধরনের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। মা-ছেলের এই সফলতা অনেককেই উদ্দীপ্ত করবে। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর