বগুড়ায় কোরবানির হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। জেলার বিভিন্ন হাটে হাটে কোরবানির পশু প্রচুর পরিমাণে উঠলেও সে তুলনায় ক্রেতা কম। গেল কয়েকদিনের হাটে কোরবানির পশুর মধ্যে গরু ও ছাগলের দাম তুলনামূলকভাবে গতবারের চেয়ে বেশি।
খামারী ও পশুর ব্যাপারীরা বলছেন, খাবার মূল্য বেশি হওয়ার কারণে এবার পশুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। হাটের পাশাপাশি বগুড়ায় অনলাইনেও পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। বগুড়ায় চাহিদার তুলনায় ২২ হাজার পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় গরুর হাট। এই হাটের পাশাপাশি, ঘোড়াধাপ, সুলতানগঞ্জ হাট, শেরপুর হাট, সাবগ্রাম হাট, পেরী হাট, নামুজাসহ প্রায় শতাধিক স্থানে হাট বসে। এই সব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানির পশু কেনাবেচা হয় ঠিক তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়। বগুড়ার খামারীরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে কোরবানি উপযোগী পশু লালন পালন করে লাভের আশা করছেন। খামারীরা দেশী জাতের প্রচুর গরুর লালন পালন করেছেন। খামারি এখন কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নিজেদের খামারের গরু, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানির প্রাণি হাটে তোলার আয়োজনে রয়েছে।
এদিকে, বগুড়ার হাটগুলোকে কেন্দ্রে করে মৌসুমী গরুর ব্যাপারীদের আনাগোনা বেড়েছে। গরুর ব্যবসায়ীরা এক জেলা থেকে অন্য জেলার হাটে গরু বিক্রি করে থাকে। গত বছর বগুড়ার হাটগুলোতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে। বগুড়ার বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিক্রি করে থাকে।
বগুড়ার খামারী রফিকুল ইসলাম রাকিব জানান, গরু লালন-পালন খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গরুর চারণ ভূমি না থাকায় সব খাবারই কিনতে হচ্ছে। আর বাজারে গরুর খাদ্যের দাম আগের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। গরু খামারে লালন-পালন করে এখন আর বেশি লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। এবছর একটি মাঝারি সাইজের গরু বগুড়ায় কিনতে দাম পড়বে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। বাজারে কোরবানির গরু মূল্য এবার বেশি হবে।
বগুড়া সদর উপজেলার খামারীরা জানান, গত কয়েক বছরে ভারতীয় গরু কম সরবরাহের কারণে জেলায় দেশীয় জাতের গরুর চাহিদা বেড়ে গেছে। গত বছরের এ চাহিদা মাথায় রেখে খামারিদের মাঝে গরু লালন-পালনের ইচ্ছেও বেড়ে যায়। কোরবানির হাটকে সামনে রেখে বগুড়ায় খামারিরা পশু তাজা করেন। কিন্তু গরুর খাবারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার দাম বাড়বে। তবে হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও পশু বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবারও কোরবানির হাট কিছু দিনের মধ্যে জমে উঠবে। খামারে এবার প্রচুর পরিমাণে দেশীয়জাতের গরু পালন করা হয়েছে। খামারে লালন পালন করা গরুর সংখ্যা বেশি হবে। এবারের কোরবানির জন্য জেলার মোট ৪৪ হাজার ৩২৯ জন খামারি তাদের পশু প্রস্তুত করেছেন। গত বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি, এবার তা ২ লাখ ৯৯ হাজার ৩০২টি বাড়িয়ে প্রস্তুতকৃত পশুর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৭টি। গত বছর পশুর চাহিদা ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি, এবার তা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৪ হাজার ৪৬০টি। গত বছরের তুলনায় বগুড়ায় কোরবানির পশুর চাহিদা বেড়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫টি। চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুতকৃত পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ২২ হাজার ১৩৭টি।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর জেলায় খামারের সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ১৫টি, এবছর তা ১ হাজার ৬৮৬টি কমে মোট খামার হয়েছে ৪৪ হাজার ৩২৯টি। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯০, বলদ ৪১ হাজার ৮০৬, গাভী ৫০ হাজার ৪৫১, আর মহিষ রয়েছে ২ হাজার ৬৬০টি। মোট গবাদিপশুর পরিমাণ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৭টি। এছাড়াও ছাগল রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৫, ভেড়া ৩১ হাজার ৪৭৩টি। মোট ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮টি।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম জানান, মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে চলতি বছর জেলায় পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়। গত বছরের চেয়ে বগুড়ায় প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এবছর জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে প্রস্তুতকৃত কোরবানির পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে ২২ হাজার ১৩৭টি। জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়েও বেশি পশু প্রস্তুত থাকায় কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু লালন পালন হয়। বাড়তি পশুগুলো বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। সবচেয়ে বেশি যায় ঢাকায়। এছাড়া চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেটে যায় কোরবানির পশু। বগুড়াবাসী দেশীয় পশু দিয়েই তাদের কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট উপজেলায় খামারীরা দেশীয়জাতের গরু লালন পালন করেছে। গরুগুলো লালন-পালন করেছে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুষি, ভাতের ফ্যান, খড়, খুদ কুড়া খাওয়ায়ে। খামারীরা বলছেন, কোন ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। স্থানীয় প্রাণি চিকিৎসকদের পরামর্শে গরুগুলো কোরবানির যোগ্য করে তোলা হয়েছে। তবে গরুর সকল প্রকার খাবার, ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এবার দামও বৃদ্ধি পাবে।
সদর উপজেলার বগুড়া ভান্ডার এগ্রো খামারের পরচিালক তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব জানান, গত বছর একটি গরুর পেছনে প্রতি মাসে খাবার বাবদ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবছর সেখানে ডাবল খরচ হচ্ছে। বাজারের খাবারের মূল্য বেশি। যে কারণে একটি গরুর পেছনে এবার ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে প্রতি মাসে। আমরা যদি পুরো গরু ওজন করে বিক্রি করি তাহলে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। এবার হাটেও দাম বৃদ্ধি পাবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত