শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
গল্প

ভানু ও তার জাদু বল

ইন্দিরা দাশ

ভানু ও তার জাদু বল

বছর ছয়েকের ভানু বাবার সঙ্গে চলেছে বাজারের পথে। খেতের ফসল শহরের বাজারে বিক্রি করার জন্য সপ্তাহে দুদিন শহরে তাদের আসতেই হয়। পথের মধ্যে একদল স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েকে দেখে ভানু তার বাবাকে বলল, “আমিও ওদের মতো ইস্কুলে যেতে চাই, আমি কেন ইস্কুলে যাই না বাবা?”

ভানুর বাবা বললেন, “আমরা যে গরিব মানুষ বাবা, ইস্কুলে পড়তে গেলে যে অনেক পয়সা লাগে।”

ভানু একথার কোনো উত্তর দিল না ঠিকই কিন্তু তার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। এমন সময় সে দেখে একজন বৃদ্ধা রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে কিছুতেই সেটা পারছেন না। বেশ কয়েকজনের কাছে সাহায্য চাইলেও তারা কোনো তোয়াক্কা করছে না। ভানু বাবাকে কিছু না বলেই দৌড়ে ওই বৃদ্ধার হাতটা ধরে তাকে রাস্তাটা পার করে দিল। বৃদ্ধা ভানুর হাতটা ধরে বললেন,

“তুমি কে বাবা? আমায় যে উপকার করলে বড়।”

“আমি ভানু।”

“বাহ্, খুব ভালো নাম। আশীর্বাদ করি তোমার মনের সব ইচ্ছা পূরণ হোক।”

এই বলে বৃদ্ধা লাঠিতে ভর করে এগিয়ে গেলেন। তাই দেখে ভানুও দৌড়ে তার বাবার কাছে ফিরে যায়। বাজারের কাজ মিটিয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ি ফেরার সময় ভানু পথের ধারে এক ঘুমন্ত শিশুকে দেখে থমকে গিয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করে, “বাবা ঐ ভাইটা রাস্তায় ঘুমাচ্ছে কেন? ওদের বাড়ি নেই?”

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভানুর বাবা মাথা নেড়ে “না” বললেন।

একদিন গ্রামের রাস্তার ধারে একটা গাছের নিচে একা বসে আছে ভানু। তার মনটা খুব খারাপ। কারণ সে-ও চায় সবার মতো পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ইস্কুলে যেতে। হঠাৎ তার সামনে এসে হাজির হলেন সেই বৃদ্ধা। ভানু তাকে দেখে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করে, “বুড়িমা তুমি এখানে কী করে এলে?” “সেসব আমি পরে বলব। এখন এটা রাখো দেখি।” এই বলে তিনি একটা বল নিয়ে ভানুর সামনে ধরলেন। ভানু খুব খুশি হয়ে বলটা হাতে নিয়ে বলল,

“এটা আমার জন্য বুড়িমা?”

বৃদ্ধা বললেন, “হ্যাঁ তোমার জন্য এটা। তবে এটা কিন্তু সে বল নয়, এটা একটা জাদু বল। এই বলের কাছে যা চাইবে তাই পাবে। কিন্তু কখনো কারোর ক্ষতির জন্য কিছু চাইলে এই বল আর কোনো কাজ করবে না। সব শক্তি হারিয়ে ফেলবে।” বৃদ্ধা চলে যাওয়ার পর ভানু বলটাকে খুব যত্ন করে ধরে বলল,

“আমার পড়তে খুব ইচ্ছা করে, আমাকে একটা বই এনে দেবে?” মুহূর্তেই ভানুর সামনে একটা বই এসে যায়। আনন্দে আত্মহারা ভানু তারপর একের পর এক নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে শুরু করে। শহরে পথের ওপর যে শিশু ঘুমিয়েছিল তার জন্যও একটা ঘর চেয়ে নিয়েছে এই জাদু বলের কাছে।

মনের আনন্দে ভানু স্কুলড্রেস পরে, পিঠে বইয়ের ব্যাগ গিয়ে স্কুল যাওয়া শুরু করে।

এমন সময় মায়ের ডাকে ঘুমের সঙ্গে স্বপ্নটাও ভেঙে যায় তার। তার মানে সে স্বপ্ন দেখছিল। আবার মনটা খারাপ হয়ে যায় ভানুর। বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে ঠিক এমন সময় সে দেখতে পেল তার বালিশের পাশেই জ্বলজ্বল করছে সেই জাদু বলটা। ছোট্ট ভানু বলটা হাতে নিয়ে বলল, “তার মানে এই জাদু বল সত্যি সত্যি আমার কাছে আছে?” এমন সময় তার মায়ের গলা শোনা যায়, “তাড়াতাড়ি বাইরে এসে দেখ ভানু, তোর বাবা তোর জন্য বই-খাতা নিয়ে এসেছে। তুই তো এবার ইস্কুলে ভর্তি হবি।”

আনন্দে ভানু এক দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর