দ্বিতীয় অধ্যায় : জীবকোষ ও টিস্যু
সৃজনশীল প্রশ্ন :
ক. প্রকৃত কোষ কী? ১
খ. কার্ডিয়াক পেশি বলতে কী বুঝ? ২
গ. উদ্দীপকের ‘A’ চিহ্নিত অংশের গঠন ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের ‘X’ ও Y এর গঠন ও কার্যিক মিল অমিল বিশ্লেষণ কর। ৪
উত্তর : ক. যেসব কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে তাদের প্রকৃত কোষ বলে।
খ. কার্ডিয়াক পেশি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃদপিণ্ডের এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি। এ টিস্যুর কোষগুলো নলাকৃতি, শাখান্বিত ও আড়াআড়ি দাগযুক্ত। এ টিস্যুর কোষগুলোর মধ্যে ইন্টারক্যালাটেড ডিস্ক থাকে। কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে। এ পেশি রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া সচল রাখে।
গ. উদ্দীপকের প্রথম চিত্রটি হলো একটি উদ্ভিদ কোষের। চিত্রের A চিহ্নিত অংশটি হলো কোষপ্রাচীর। নিচে কোষপ্রাচীরের গঠন ব্যাখ্যা করা হলো।
কোষপ্রাচীর উদ্ভিদ কোষের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কোষপ্রাচীর মৃত বা জড়বস্তু দ্বারা গঠিত। এতে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন, পেকটিন, সুবেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর প্রোটিন, লিপিড ও পলিস্যাকারাইড দ্বারা গঠিত এবং ছত্রাকের কোষপ্রাচীর কাইটিন নির্মিত।
প্রাথমিক কোষপ্রাচীরটি এক স্তরবিশিষ্ট। মধ্যপর্দার ওপর প্রোটোপ্লাজম থেকে নিঃসৃত কয়েক প্রকারের রাসায়নিক দ্রব্য জমা হয়ে ক্রমশ গৌণ প্রাচীর সৃষ্টি হয়। এ প্রাচীরে মাঝে মাঝে ছিদ্র থাকে যাকে কূপ বলে।
কোষপ্রাচীর কোষকে দৃঢ়তা প্রদান করে। কোষের আকার ও আকৃতি বজায় রাখে। পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘ. উদ্দীপকের X চিত্রটি হলো ট্রাকিড। এটি জাইলেম টিস্যুর অংশ। আবার Y চিত্রটি হলো স্ক্লেরেনকাইমা। এটি সরল টিস্যুর প্রকার নিচে ট্রাকিড ও স্ক্লেরেনকাইমার গঠন ও কার্যিক মিল অমিল বিশ্লেষণ করা হলো।
এদের মিল হলো উভয়ের কোষগুলো লম্বা ও পুরু প্রাচীর বিশিষ্ট। উভয়ের কোষপ্রাচীরে লিগনিন জমে পুর হয়। উভয়ই নগ্নবীজী উদ্ভিদে পাওয়া যায়। উভয়ই উদ্ভিদের কোষকে দৃঢ়তা প্রদানসহ পানি ও খনিজ লবণ পরিবহনে সাহায্য করে।
এদের অমিল রয়েছে।
১. ট্রাকিড হলো একপ্রকার সরল টিস্যু।
২. ট্রাকিডের কোষগুলো পুরুত্বানুসারে কয়েক ধরনের হয়। যেমন বলয়াকার, সর্পিলাকার, সোপানাকার, জালিকাকার ও কূপাঙ্কিত। অন্যদিকে স্ক্লেরেনকাইমার কোষগুলো প্রধানত দুই ধরনের হয়। যথা ফাইবার ও স্ক্লেরাইড।
৩. ট্রাকিডের প্রান্তদ্বয় সব সময় সরু ও সূচালো হয়ে থাকে। অন্যদিকে স্ক্লেরেনকাইমার ফাইবারের কোষের প্রান্ত সরু হলেও কখনো ভোঁতা হতে পারে।
সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে উল্লিখিত ট্রাকিড (ঢ) ও স্ক্লেরেনকাইমা (ণ) এর মধ্যে বেশ মিল ও অমিল বিদ্যমান।
সৃজনশীল প্রশ্ন : নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম লিখ। ১
খ. আত্মীকরণ শক্তি বলতে কী বুঝায়? ২
গ. উদ্দীপকের কোনটি পরীক্ষার্থীদের উত্তর স্মরণ রাখতে সাহায্য করবে? সেটির গঠন ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. “পরিবেশে টিকে থাকতে ও দেহকে কর্মক্ষম রাখতে A, B ও C এর সমন্বয় প্রয়োজন— বিশ্লেষণ কর। ৪
উত্তর : ক. কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম হলো—
Artocarpus heterophyllus
খ. ফটোফসফোরাইলেনশন প্রক্রিয়ায় ATP উৎপন্ন হয় এবং ইলেকট্রন NADP-কে বিজারিত করে NADPH + H + উৎপন্ন করে। ATP এবং NADPH + H+ কে আত্মীকরণ শক্তি বলে।
গ. পরীক্ষার্থীদের উত্তর স্মরণ রাখতে সাহায্য করবে নিউরন। নিউরনের গঠন নিচে দেওয়া হলো—
নিউরনের তিনটি অংশ থাকে। যথা—
১. কোষদেহ : কোষদেহ বহুভুজাকৃতি এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত। কোষের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজিবডি, রাইবোসোম, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, লাইসোসোম, চর্বি, গ্লাইকোজেন, রঞ্জক কণাসহ অসংখ্য নিসল দানা থাকে। তবে নিউরনের সাইটোপ্লাজমে সক্রিয় সেন্ট্রিওল থাকে না বলে নিউরন বিভাজিত হয় না।
২. ডেনড্রাইট : কোষদেহ থেকে একাধিক কোষ শাখা বের হয়। এরা উদ্দীপনা নিউরনের দেহের দিকে পরিবাহিত করে। এদের সংখ্যা শূন্য থেকে কয়েকটি পর্যন্ত হতে পারে।
৩. অ্যাক্সন : কোষদেহ থেকে উৎপন্ন বেশ লম্বা শাখাহীন তন্তুকে অ্যাক্সন বলে। এর চারদিকে পাতলা আবরণটিকে নিউরিলেমা বলে। নিউরিলেমা পরিবেষ্টিত অ্যাক্সনকে স্নায়ুতন্তু বলে। নিউরিলেমা ও অ্যাক্সনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহ পদার্থের একটি স্তর থাকে। একে মায়োলিন বলে।
নিউরিলেমা আবরণটি অবিচ্ছিন্ন নয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর এটি সাধারণত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। এ বিচ্ছিন্ন অংশে নিউরিলেমার সঙ্গে অ্যাক্সনের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ঘটে। এ আবরণবিহীন অংশকে র্যানডিয়ার এর পর্ব বলে। অ্যাক্সনের মূল অক্ষের আবরণীকে অ্যাক্সলেমা বলে। অ্যাক্সন উদ্দীপনা পরবর্তী নিউরণের ডেনড্রাইটের দিকে পরিবাহিত করে। একটি নিউরনে একটি মাত্র অ্যাক্সন থাকে।
ঘ. চিত্রের A কোষটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন, B হলো অনৈচ্ছিক পেশির কোষ এবং C হলো হৃদপেশির কোষ।
পরিবেশে টিকে থাকতে ও দেহের কর্মক্ষম রাখতে A, B ও C এর সমন্বয় প্রয়োজন। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো—
স্নায়ুকোষ উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে এবং মস্তিষ্ক তাতে সাড়া দেয়। উচ্চতর প্রাণীতে স্নায়ু টিস্যু স্মৃতি সংরক্ষণ করাসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তনালি, পৌস্টিকনালি ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে। এরা প্রধানত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সঞ্চালনের অংশ নেয়। কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে। হৃদপিণ্ডের সব কার্ডিয়াক পেশি সমন্বিতভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। মানব ভ্রূণ সৃষ্টির একটা বিশেষ পর্যায় থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হৃদপিণ্ডের কার্ডিয়াক পেশি একটা নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সচল রাখে।
উক্ত টিস্যুগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি অকেজো হয়ে গেলে পরিবেশে টিকে থাকা কোনো প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ স্নায়ুতন্ত্র উদ্দীপনা গ্রহণ করতে না পারলে মস্তিষ্ক থেকে প্রতিবেদন সৃষ্টি হবে না। ফলে প্রতিরক্ষণ সম্ভব হবে না। অনৈচ্ছিক পেশির কাজ বন্ধ হলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গাগুলোর কার্যাবলি বন্ধ হয়ে যাবে। আর হৃদপিণ্ডের কার্ডিয়াক পেশির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে প্রাণীর মৃত্যু হবে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, প্রাণীর পরিবেশে টিকে থাকা এবং দেহকে কর্মক্ষম রাখতে উদ্দীপকের স্নায়ুকোষ বা নিউরন অনৈচ্ছিক পেশি ও হৃদপেশির সমন্বয় প্রয়োজন।