আমজাদ হোসেন
দুটি বড় দলের বিবদমান জটিলতায় দেশ এখন গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। জাতি হিসেবে আমাদের এখন কী হবে, আমরা কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। দুই দলের মধ্যে দূরত্ব যেন ক্রমাগত বাড়ছে। তাই আজ এই অচলাবস্থা। এটি দেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। রাজনীতি হবে জনগণের জন্য। কারণ গণতন্ত্র বলি আর রাজনীতি বলি সবই জনগণনির্ভর। এ বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছি বলেই আজ রাজনীতির বলি হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষ। এ দেশের মানুষ সহজ সরল। তারা রাজনীতির মারপ্যাঁচ বোঝে না। বোঝার কথাও নয়। তারা চায় খেয়ে-পরে ভালোভাবে সুখ-শান্তিতে বাঁচতে। আর এই বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব সরকারের। সরকারের ব্যর্থতা আজ দেশকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিচ্ছে। জটিলতা নয়,সব সমস্যার সমাধান চায় জাতি। আর এই শান্তি এনে দিতে পারে সরকার। আর সরকারের সদিচ্ছার ওপরই এখন নির্ভর করছে দেশ ও জাতির কল্যাণ। আমরা আর সংঘাত চাই না, দ্বন্দ্ব চাই না, দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।
সুচন্দা
অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো আমরা শিল্পীরাও শান্তিতে ঘুমোতে চাই। নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করতে চাই। আমরাও রাজনৈতিক-সচেতন। রাজনীতিবিদদের শ্রদ্ধা করি। আমরা তাদের কাছে বেশি কিছু প্রত্যাশা করি না। শুধু শান্তি ও নিরাপদে থাকার মৌলিক অধিকারটুকু চাই। বর্তমান জটিলতায় শিল্প-সংস্কৃতিসহ সব কিছুই স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আমরা কতটুকু এগোতে পারব নাকি আরও পিছিয়ে পড়ব তা নিয়ে ভাবার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, দেশকে বাঁচান, দেশের মানুষকে বাঁচান। আগে দেশ ও জাতি। তারপর অন্যকিছু। অনেকের মতো আমিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। তখন একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সবার কাছে অনুরোধ, আমাদের সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দেবেন না।
আবুল হায়াত
আমি এ ধরনের রাজনীতি বুঝি না আর বুঝতেও চাই না। জেদ নিয়ে রাজনীতি হয় না। আজ তাদের জেদের কারণে মরতে হচ্ছে কত মানুষকে। আমরা এই রাজনীতি চাই না। যে দেশের রাজনীতি মানুষের কথা চিন্তা করে না, আমি ওই ধরনের রাজনীতিকে ঘৃণা করি। আজ একের পর এক শুটিং পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেক নাটকের শুটিং বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন ঘরে বসে আছি। এভাবে আর কত দিন। আজ আমার ঘরে খাবার না থাকলে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার রোজি-রোজগারের ব্যবস্থা আমারই করতে হবে। আমি বলতে চাই, এই জেদের রাজনীতি বন্ধ করে মানুষের জন্য রাজনীতি করতে হবে। তা না হলে রাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকবে সাধারণ মানুষ।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
দুই নেত্রীর মধ্যে দূরত্ব এবং দুই পক্ষের মধ্যে বিবদমান তিক্ততা দূর করার একমাত্র উপায় হলো অতীতের ব্যালেন্সশিট না মেলানো। কারণ অতীত নিয়ে কথা বললেই দুই পক্ষ একে অপরকে অভিযুক্ত করার হাজার হাজার ইস্যু খুঁজে পাবে। তারপর ইস্যুর ছোড়াছুড়িতে আমরা সেই তিমিরেই রয়ে যাব। এগুলো থেকে পরিত্রাণের একটিই উপায়- দুই পক্ষকেই বলা এনাফ ইজ এনাফ। দুই পক্ষই দুই পক্ষকে যথেষ্ট গালিগালাজ করেছি, অপমান করেছি, নির্মূলের চেষ্টা করেছি। একদল গ্রেনেড মেরে দুনিয়া থেকে নির্মূলের চেষ্টা করেছি তো আরেক দল বাড়ি থেকে নির্মূল করে দিয়েছি। এসব তো অনেক দিন করলাম। এবার নতুন কিছু করি। একজন আরেকজনকে ভালো না বাসতে পারি, সৌজন্যতাটুকু একটু দেখাই। দুই দল পাশাপাশি সহাবস্থান করি এবং রাজনীতি করি ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা দিয়ে। জাতির সামনে রোডম্যাপ হাজির করি, দেশের উন্নয়নে কে কি করতে চাই, কীভাবে করতে চাই প্রতিযোগিতা হোক এসবের। প্রতিযোগিতা হোক গালির নয়, নির্মূলের নয়, ভালোবাসার।
হায়দার হোসেন
বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক এই অস্থিরতা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রথমে আমাদের মনেপ্রাণে স্থির করতে হবে, আমরা দেশের জন্য কাজ করব, মানুষের জন্য কাজ করব। আমাদের ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। আমরা যতই টকশো করি না কেন আর মনে মনে যদি স্থির করে রাখি টকশো থেকে বের হওয়ার পর আমরা সব কিছু ভুলে যাব, তবে কী করে হবে। শীতের এই সময়টা আমাদের শিল্পীদের জন্য শো করার সময়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছি। একের পর এক শো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনি করে চলতে থাকলে কী করে হবে। তাই আমি বলতে চাই, শুধু রাজনীতির জন্য রাজনীতি নয়, মানুষের জন্য রাজনীতি করা উচিত।