এই স্ট্যাটাসটা সাংকেতিক ভাষায় দিতে পারলে ভালো লাগতো তাতে আমাদের বিদেশি বন্ধুরা আমাদের ভেতরের ক্লেদ দেখতে পেতো না। অনুবাদের কল্যাণে সব কুসুম বেরিয়ে আসে আজ ক্লেদ ভেদ করে।
তবুও একটু বলতে চাই।
এখন সময়টা বোধ হয় বদলেই গেছে। ফিল্মমেকাররা পরস্পর পরস্পরের সাথে এমন প্রতিযোগিতায় লেগে আছে যে, একজন আরেকজনকে পারলে ধাক্কা দিয়ে ট্রাকের নীচে ফেলে দিবে এবং ফেলে কোনো রকম মনোবেদনা ছাড়াই আধা ঘণ্টা পরে প্রেমিকার সাথে বসে বসে থাই ক্লিয়ার মাশরুম স্যুপ খাবে। এরকম কথাই হচ্ছিলো প্রবীণ বন্ধু নুরুল আলম আতিকের সাথে।
ঠিক আছে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে, হয়তো ঈর্ষাও থাকবে। কিন্তু সেটা যদি এমন জায়গায় চলে যায় যেটা সবাইকেই ছোট করে তাহলে সেটা বেদনার।
আমার মনে আছে- দুই হাজার দশের পরে যখন আমাদের একটু একটু আনাগোনা চলতে শুরু করলো ফেস্টিভ্যাল অঙ্গনে, তখন আমরা সারাক্ষণ চেষ্টা করতাম প্রোগ্রামার বা ক্রিটিকদের সামনে ফেলো ফিল্মমেকারদের সম্বন্ধে ভালো কথা বলতে এবং সেটা ওই ফিল্মমেকারের অনুপস্থিতিতেই। পরবর্তীতে সেই ফিল্মমেকার অন্য কোথাও গিয়ে হয়তো শুনেছে তার সম্পর্কে ভালো কথা বলেছি, সে তখন যোগাযোগ করে ভালো লাগার কথা বলেছে। আমরা একে অন্যের পরিচিত কন্টাক্টগুলোও শেয়ার করতাম। যাতে সবাই মিলে আগাতে পারি। এখনো নিশ্চয় বেশীরভাগ ফিল্মমেকারই এরকমই করে।
তবে এর বাইরেও এক রকম আত্মঘাতী প্রবণতাও দেখছি। শনিবার বিকেল আটকে যাবার পর ইউরোপীয় এক দূতাবাসের পার্টিতে আমারই এক ফেলো ফিল্মমেকার বলেছে আমি নাকি নিজে সেন্সর বোর্ডকে দিয়ে ছবিটাকে আটকিয়েছি। ভাগ্য ভালো উপস্থিত অন্য ফিল্মমেকার বন্ধুরা এই নির্দয়তার প্রতিবাদ করেছে। এই কাজটা করেছে এমন একজন ফিল্মমেকার যার ছবি নিয়ে আমি আমার ফেসবুকে এন্তার ক্যাম্পেন করেছি। এবং আমি আবারও তার ছবি মুক্তির আগে একই ক্যাম্পেন করবো।
আরেকজন ফিল্মমেকার যার ছবি আটকে যাওয়ার পর আমি নিজ উদ্যোগে তৎকালীন যুগ্ম সচিব হারুন রশিদ ভাইকে ফোন করেছি, সে আমার ডুব আটকানোর পর তার ফেসবুকে আমাকে অত্যন্ত বাজে ভাষায় আক্রমণ করেছে।
কেউ কেউ ফেসবুকে ছদ্ম নামে ফেসবুক পেজ চালায় আমাকে বা অন্য ফিল্মমেকারদের চাবুক মারার জন্য।
তাদের কারো প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নাই। কারণ আমি এর পেছনের কারণটা মমতা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। আমি তাদের সাফল্য আর আত্মার শান্তি কামনা করি যাতে তারা অন্যের দিকে তাকানোর আগ্রহ বা সময় হাতে না পায়।
তবে তাদের সবার উদ্দেশ্যে একটা কথা বলার জন্যই এই স্ট্যাটাস!
ভাইয়েরা আমার, এই সব আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, ছোট করা-বড় করা, দলবাজি এইসব কিছুই শেষ পর্যন্ত ফিল্মমেকার হিসাবে আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করবে না।
শেষ পর্যন্ত আমরা যে ছবিটা বানালাম, যে দৃশ্যটা শ্যুট করলাম, যে বেদনা আঁকলাম, যে আনন্দ ছড়ালাম, যে চরিত্র বানালাম সেগুলোই আমাদের হয়ে কথা বলবে।
ফলে শক্তিটা ওখানে ব্যয় করলে নিজের এবং দেশের লাভ।
পুনশ্চ: এই যে স্ট্যাটাস লিখলাম হুদাই সময় নষ্ট করে, এটাও থাকবে না কোথাও, আসবে না কোনো কাজে। এই জন্যই ফেসবুকে কম আসি।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম