১০ জুলাই, ২০২০ ১৫:৩৪

পুরো সমাজ ব্যবস্থাই আসলে দাঁড়িয়ে আছে "প্রতারণার" ওপর!

আমিনুল ইসলাম

পুরো সমাজ ব্যবস্থাই আসলে দাঁড়িয়ে আছে

রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, পুলিশ অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। ঠিক আছে বুঝতে পারলাম বিষয়টা।

এই নিয়ে এখন নানান লেখালেখি চলছে। সেকি আলোচনা- সমালোচনা এই লোক'কে নিয়ে! এই লোক একটা বিশাল "প্রতারক!"

কিন্তু মূল বিষয়টা নিয়ে কেউ একটা কথাও বলছে না।

সেনাবাহিনীর কর্নেল, মেজর কিংবা পুলিশ অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে যে তিনি এতো দিন প্রতারণা করে এসছে- সেটা কীভাবে সম্ভব হলো?

এর মানেটা আসলে কি?

একজন মানুষ সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, পুলিশ অফিসার ইত্যাদি হলে কী তার পক্ষে যে কোন কিছু করে ফেলা সম্ভব?

তিনি না হয় মেজর, কর্নেল, ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা পুলিশ অফিসার ছিলেন না। মিথ্যা পরিচয়ে এইসব কাজ করেছেন। এই জন্য আপনারা তাকে প্রতারক বলছেন।

কিন্তু যারা সত্যি সত্যি কর্নেল, মেজর , পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট; তাহলে তারা কি তাদের নিজ পরিচয়ে এইসব অনিয়ম করে বেড়াচ্ছে?

তিনি যদি এইসব পরিচয় দিয়ে এতো সব অনিয়ম করে বেড়াতে পারে- এর মানে তো পরিষ্কার! এইসব পরিচয় দিলে সাত খুন মাফ!

আপনারা এখন তাকে না হয় প্রতারক বলছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে যে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে- সমাজে এই সব পরিচয়ধারী মানুষগুলোর জন্য যে কোন অনিয়মও আসলে নিয়ম! এই নিয়ে না বলা যাবে কোন কথা, না করা যাবে কোন প্রতিবাদ।

এই যে বুয়েট, মেডিকেল থেকে পাশ করা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারগুলো বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ফরেন ক্যাডারে যাচ্ছে, পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছে; কেন হচ্ছে তারা?

তাদের শৈশব, কৈশোর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তো কেটেছে- ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্নে। তাহলে হঠাৎ করে তারা বিসিএস ক্যাডার হবার পেছনে ছুটছে কেন?

কারণ জানেন তো?

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে তারা যখন আবিষ্কার করেছে- একজন পুলিশ অফিসারের সাত খুন মাফ! একজন ম্যাজিস্ট্রেট চাইলেই সকল রকম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। একজন বিসিএস ক্যাডারের বৌয়ের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা থাকে; তখন তারা তাদের স্বপ্ন'টাও পরিবর্তন করেছে !

শুধু কি তাই?

বিসিএস ক্যাডার হলে এমনকি দেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলোসহ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের নিয়ে প্রথম পাতায় বিশাল সংবাদ রচনা করে- কীভাবে তারা ক্যাডার হলো! আহা, কতো'ই না সম্মান! অথচ বছরে পর বছর, যুগের পর যুগ গান গেয়ে বাংলাদেশিদের মনে জায়গা পাওয়া গায়ক কিশোর দা কয়দিন আগে মারা গেলেন; তার জায়গা হয়েছে ওই এক'ই পত্রিকার শেষ পাতার এক কলামে।

এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা- আমরা জ্ঞানী-গুণীদের এখন আর মূল্যায়ন করি না। শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান এই সমাজে এখন আর মূল্যায়িত হয় না।

রিজেন্টের সাহেদ যে নিয়ম করে প্রতিদিন মাঝ রাতে টেলিভিশনগুলোর টকশোতে ঝড় তুলতো- কীভাবে সে এইসব টকশোতে গিয়ে বুদ্ধিজীবী বনে গেল?

এইসব সাংবাদিকরা হয় তার টাকা খেয়েছে, কিংবা তার দেয়া ফাইভ স্টার হোটেলের নানান সব পার্টিতে গিয়ে আনন্দ ফুর্তি করেছে অথবা নানান ভাবে কোন কোন ফায়দা হাসিল করেছে।

এরা কি আমার-আপনার মতো মানুষদের কথা বলার জন্য ডাকে?

তাহলে, সাহেদের মতো মানুষ; যিনি কিনা স্কুল লেভেলের বেশি পড়াশুনা পর্যন্ত করতে পারেনি; সে কি করে এই দেশে বুদ্ধিজীবী বনে যায়?

কারণ এই দেশে টাকা এবং ক্ষমতাই সব কিছু। এরাই এখন এই দেশের বুদ্ধিজীবী!

আজ আপনারা বলছেন- সাহেদ নিজেকে মেজর, কর্নেল, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে "প্রতারণা" করেছে।

এই সব পরিচয় দিলেই তাহলে এই দেশে যে কোন কাজ করে ফেলা যায়!

বাহ কি চমৎকার!

আপনারা কি বুঝতে পারছেন না- পুরো সমাজ ব্যবস্থাই আসলে দাঁড়িয়ে আছে "প্রতারণার" ওপর!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর