রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গাজীপুরে কাদের

ভোট ছাড়া ক্ষমতা বদল হবে না

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

ভোট ছাড়া ক্ষমতা বদল হবে না

গাজীপুরে গতকাল মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। দুনিয়ার সব দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই  নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনা সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। গতকাল বিকালে গাজীপুর শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সেভ এক্সিট নিতে বলে, তারা আমাদের নিরাপদে প্রস্থান নিতে বলে। কিন্তু কোন মুখে তারা এমন কথা বলে। তারা তো আন্দোলন করতেই জানে না। বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশনেত্রী বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। অথচ দেখতে দেখতে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে একটি মিছিলও বের করতে পারেননি। তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, গণঅভ্যুত্থান করবেন। একটা মিছিল করতে পারেন না। শেখ হাসিনা দয়া করে আপনাদের দণ্ডিত আসামি নেত্রীকে বাসায় থাকতে দিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত হয়ে যান। বিএনপি আবারও আগুনসন্ত্রাস শুরু করেছে। কাঁচপুর ব্রিজে শেখ হাসিনার উদ্বোধনী ফলক পুড়িয়ে ফেলেছে। এসব আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। এবার খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ডিসেম্বরে, আন্দোলনের মোকাবিলা হবে। খেলা হবে ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে। ডিসেম্বরে লাঠির সঙ্গে বাঁশ বেঁধে আনবেন, তা হবে না, খেলা হবে, মোকাবিলা হবে।  তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, বিএনপি শুধু বলে তাদের সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। গাজীপুরে আসেন ফখরুল ভাই! দেখেন ঢল কাকে বলে। তিনি সিলেটে বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে বলেন, সিলেটে ঢল নেই, সুরমা নদীর ঢল। আর এখানে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ। সিলেটের সঙ্গে গাজীপুরকে মিলিয়ে দেখুন। এখানে শুধু মহানগর, আর ওখানে পাঁচ জেলা। মিলিয়ে দেখুন, জনতার ঢল কোথায় বেশি। বিএনপির সমাবেশ যেখানে, সেখানে সারা দেশ থেকে সাত দিন আগে থেকেই তারা রওনা দেন। কেউ কেউ তিন দিন আগে থেকে ঢল নামিয়েছে। কাঁথা-বালিশ, বিছানাপত্র, হান্ডি-পাতিল সব নিয়ে নেতা-কর্মীরা সারা দেশ থেকে সিলেটে গেছেন। যেখানে সমাবেশে সাত দিন আগে থেকে রওয়ানা হয়। কারণ ওখানে শুধু খাওয়া আর খাওয়া। খানাপিনা ভালোই চলছে। পাতিলে পাতিলে খাওয়া। গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, মাছের টুকরা এ আর কী বলব। এরপর পেপসি বা কোকাকোলা। ভালোই আছে বিএনপি।

দেশের উন্নয়ন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন উন্নয়ন কাকে বলে। পদ্মা সেতু হয়ে গেল নিজের টাকায়। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেল চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকায় তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেল, এলেঙ্গা সিক্স লেন এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। শেখ হাসিনা এক দিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের এত উন্নয়ন দেখে বিএনপির মনে বড় জ্বালা শুরু হয়েছে। মির্জা ফখরুলের বুকে বড় জ্বালা। ফখরুল সাহেবরা কালো চশমা পরেন, তাই তারা কিছুই দেখতে পান না। তারা দিনের আলোতে অমাবস্যার অন্ধকার দেখেন। দিনের আলোতে পূর্নিমা রাতের চাঁদ ঝলমল। তা দেখেন না। দেখতে পান অমাবস্যা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। আর ২১ আগস্টের পরিকল্পনা করে তার ছেলে তারেক রহমান। তিনি বলেন, সাত বছরের সাজা হয়েছে অর্থ পাচারকারী তারেক রহমানের। ভিডিও কনফারেন্সে হাসিনা, হাসিনা বলে। শেখ হাসিনাও বলতে পারে না। বিএনপির সম্মেলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ফখরুলও জানেন না কবে সম্মেলন। মনে নেই কবে সম্মেলন। আমরা দুই মাসে সম্পাদকমণ্ডলী, এক মাসে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক করে জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ডে সম্মেলন হচ্ছে। বিএনপিতে এসব আছে?

সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিককে হেনস্তা করেছে, আজকে খালেদা জিয়ার এতিমের অর্থ আত্মসাতের যে মামলা সেই মামলাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল। তাদের নেতা তারেক রহমানকে এমনভাবে পিটিয়েছিল যে বিমানে উঠতে হুইল চেয়ার লেগেছিল। আবার তারাই আজকে তত্ত্বাবধায়ক চাচ্ছে। কামরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সংসদ বহাল থাকবে। ওই নির্বাচনে আপনারা (বিএনপি) যদি না আসেন আপনাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন দলীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহান গোলাপ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামসুন নাহার ভূঁইয়া, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রোমানা আলী টুসি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্লাহ মণ্ডল প্রমুখ।

নতুন কমিটি : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. আতাউল্লাহ মণ্ডলের নাম ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর