আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বেলা ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সভায় বসে ইসি। এতে চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জামায়াত ও ইশরাক ইস্যু নিষ্পত্তিতে আদালতের সাম্প্রতিক আদেশ বা নির্দেশনার ওপর কার্যব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফেরত পাবে। দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত পাবে। তবে দলীয় প্রতীক একটা দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ করে দিতে হবে তাই সময় লাগবে।’
এক যুগ আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাই কোর্টের রায় গত ১ জুন বাতিল করেন আপিল বিভাগ। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এদিকে, ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
ওই সিদ্ধান্ত ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৯-এর উপবিধি (১)-এর ৩২ নম্বর ক্রমিক থেকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করার প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। তারপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনি প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি। এক যুগ বাদে গত রবিবার তা বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। সেদিনই নির্বাচন কমিশন বলেছিল, রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পরই জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গতকাল কমিশন সবকিছু পর্যালোচনা করে নিবন্ধন ও প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এখন নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন করে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ করা হবে। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘জামায়াতের দলীয় নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক দুটি ফেরত পাবে। তবে দলীয় প্রতীকটি এখন যেহেতু আমাদের এসআরও করতে হবে। এটা একটা দাপ্তরিক প্রক্রিয়া আছে। একটু সময় লাগবে।’ এ সময় তিনি জানান, ‘বর্তমানে আমাদের ৬৯টি প্রতীক আছে। এটাকে আমরা ১০০-তে উন্নীত করব। এ পুরো কাজটি একসঙ্গে সম্পন্ন হবে।’