জুলাই গণ অভ্যুত্থানে গত বছর আজকের দিনে (৩১ জুলাই) নয় দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘিরে ফের উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। কর্মসূচিকে ঘিরে শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শ্রমজীবীসহ হাজারো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে নেমে আসে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। বাধে সংঘর্ষ। জেলায় জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এদিন অন্তত ৯০ জন আহত এবং ৯৮ জন আটক হন। আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের টানাহেঁচড়ার ঘটনা ঘটে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে আটক করে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তার ছোট বোন গাড়ির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ ঘটনার ছবি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলে। আটককৃতরা প্রিজন ভ্যানের ভিতর থেকে ‘সামনে আসছে ফাগুন, আমরা হবো দ্বিগুণ’ বলে স্লোগান দেয়। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিক্ষোভ করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে হাই কোর্ট মাজার গেটে এলে ফটকে তালা দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আইনজীবীরা ফটক অতিক্রম করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে গেটের ভিতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলীসহ শতাধিক আইনজীবী ছিলেন। এরপর দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্ট মাজার গেটের মূল ফটকের পশ্চিম পাশ দিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ঢোকেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে ছাত্র হত্যার বিচার এবং ছয় সমন্বয়ক ও আটক অন্য শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবিতে নানা স্লোগান দেন। তারা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন। আধা ঘণ্টা পর সুপ্রিম কোর্ট চত্বর ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। হাই কোর্ট মাজার গেটের ভিতরে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, শারমীন মুরশিদ ও রেহেনুমা আহমেদ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এদিন কার্জন হলের দিক থেকে বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হাই কোর্ট মোড়ের দিকে এগোতে চাইলে তাদের শিশু একাডেমির সামনে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। একটু পরে বুয়েটের মেইন গেট থেকে শিক্ষার্থীর একটি দল মিছিল নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে সেখানে বক্তব্য দেন সাদা দলের শিক্ষকরা।
শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী কর্মসূচিতে যোগ দিতে হাই কোর্ট মোড়ের দিকে আসার সময় এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করতে গেলে সেখানে ধস্তাধস্তি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নুসরাত জাহান চৌধুরী ও প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া বাধা দেন। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকরা ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজ’ ও ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের’ ব্যানারে শহীদ মিনারে আলাদা মানববন্ধন করেন। পুলিশি বাধা ও তল্লাশির মুখে কর্মসূচি পালন করতে পারেননি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা অংশ নেন। মিছিল শেষে সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এত নির্মমতা, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন-নিপীড়নের পরও সরকার দায় স্বীকার করেনি। আন্দোলন এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতার হয়ে গেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করুন।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) প্রতিবাদ সমাবেশ করেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা। এতে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৬০ শিক্ষক অংশ নেন। মূল ফটকের সামনে সংহতি সমাবেশে অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা কি স্মাগলার? তারা কি খুনি? তারা শুধু নিজেদের অধিকার চেয়েছে। আমরা ছাত্রদের পাশে রয়েছি।