সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গত বছরের জুলাই আন্দোলন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন তৎকালীন এই পুলিশ মহাপরিদর্শক।
৫ পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দির এক জায়গায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের গভীর সম্পর্ক ছিল। আসাদুজ্জামান খান কামাল হারুনকে জিন নামে ডাকতেন। তিনি হারুনকে খুব কর্মতৎপর এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিকভাবে খুব কার্যকর মনে করতেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আদলত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই জুলাই আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয় মারণাস্ত্র ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি। শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা সেসময়ে পুলিশ প্রধানকে সরাসরি জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা হতো প্রতিরাতের বৈঠকে।
যেখানে তিনি বলেছেন, গত বছরের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক হতো তাদের। বৈঠকে দুইজন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ,ডিবির হারুন, র্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠকেই সব পরিকল্পনা হতো।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি আরও বলেন, কোর কমিটির এক বৈঠকে ৬ সমন্বয়ককে আটকের সিদ্ধান্ত হয়। যেখানে পরিকল্পনা করা হয় ভয়ভীতি ও মানসিক নির্যাতন করে কর্মসূচি প্রত্যাহারে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়ে জবানবন্দিতে স্পষ্ট করেছেন মামুন। উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।
জবানবন্দিতে মামুন বলেছেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যাবহার এবং আন্দোলন প্রবণ এলাকায় ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাকে লেথাল উইপেন ব্যাবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছিলেন। মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতি উৎসাহি ছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে।
জবানবন্দির শেষাংশে গুলি করে হত্যা, আহতের ঘটনায় সেসময় পুলিশ প্রধান হিসেবে অনুতপ্ত ও ক্ষমা চান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। যদিও ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে শুধু মিটিংয়ে অংশ নেয়া ছাড়া নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছুই বলেননি তিনি।
সম্প্রতি আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান। সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের শর্তে রাজসাক্ষীর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ