জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রতিষ্ঠান তৈরি না হওয়ায় দেশ গণতন্ত্রে রূপান্তর হয়নি। পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন প্রয়োজন, কিন্তু সেটিই যথেষ্ট নয়।
তিনি গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অন্তত তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে দেশে, কিন্তু পরাজিতরা সেটা মেনে নেননি। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনগুলোর ব্যাপারে যদি একমত না হওয়া যায়, তাহলে আমার শঙ্কা হচ্ছে, নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যে জায়গায় দাঁড়াব, তাতে মৌলিক কোনো হেরফের ঘটবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমি বারবার আহ্বান করেছি, তারা যথেষ্ট পরিমাণে সাড়া দিয়েছে, কিন্তু কোনো না কোনো সময় তো প্রক্রিয়াটা শেষ করতে হবে, এটা তো অনিঃশেষ প্রক্রিয়া হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটা করতে হবে।’ আলী রীয়াজ বলেন, ‘এখন যদি আমরা ওই কাঠামোটা ঠিক রাখি, একেবারেই সামান্য পরিবর্তন করি, আপনি নির্বাচন করে কোথায় যাবেন? একজন বিজয়ী হবে, একটি দল ক্ষমতায় যাবে, দেশ শাসন করবে? আমরা একটা কনসলিডেটেড ডেমোক্রেসি চাই।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং এর পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটা ফ্র্যাগমেন্টেড হয়েছে। এর কারণেই পার্থক্যগুলো তৈরি হয়েছে। আমরা কী চাই, সেটা যদি স্পষ্ট হয় এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, তাহলে আমার ধারণা, এই জায়গায় আসা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ শুরু হয়েছিল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। বাংলাদেশের ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংবিধান, শাসনব্যবস্থা, আইনি প্রক্রিয়া-বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এই মতবিনিময়ের সময় পরস্পরের সহিষ্ণু থেকেছেন, এটা আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক।’ একই বৈঠকে ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপের ফলে একটি অনির্বাচিত সরকার সহজে নমনীয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচিত সরকার আসবে, ততই ভালো। গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও এ কে আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের ঐক্য আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার। ছাত্রদের ছাত্র আর শিক্ষকদের শিক্ষক থাকতে দিতে হবে। তাদের রাজনীতিবিদ হতে দেওয়া যাবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা ঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অনাস্থা, তা দূর করতে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। দলগুলো নিজেদের কথা বলছে। কিন্তু যে সন্ধিক্ষণ জনগণ ধারণ করছে, তাতে তারা জাতীয় ঐকমত্য চায়।